রতুয়াঃ একসময় তিনি ছিলেন গ্রামের জমিদার। বেশ কয়েক বিঘা জমি ছিল। তাঁর বাড়িতে কাজ করে ভাত খেতেন বেশ কিছু শ্রমিক। কিন্তু, কয়েক বছর আগে জমিজমা তলিয়ে গেছে গঙ্গাগর্ভে। বেঁচেছিল ভিটেমাটি গত বছর তাও গিলেছে গঙ্গা। পরিবার সহ এখন তিনি দিল্লিতে নিজের ভাত জোগাড় করতে ছুটেছেন। তিনি হচ্ছেন রতুয়ার মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কান্তটোলা গ্রামের গোবর্ধন মণ্ডল। এই গ্রামেরই নিরঞ্জন মণ্ডল পরিবার সহ কোথায় গিয়েছেন তাঁর কোনও হদিস নেই। গ্রামের মানুষও জানেন না, তিনি কোথায়? তাঁরও জমিজমা-ভিটেমাটি হারিয়েছে গঙ্গাগর্ভে।
মাস দু’য়েক আগে মালদায় এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাঙন এলাকায় না গেলেও এসেছিলেন জেলায়। কথা দিয়েছিলেন এই মানুষগুলোর জন্য কিছু করবেন তিনি। দিয়েছিলেন পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি। তাঁর কথা শুনে বুকে বল পেয়েছিল ভিটেমাটি হারানো মানুষগুলো। মুখ্যমন্ত্রী মালদা থেকে চলে গিয়েছেন, ‘প্রতিশ্রুতি’ থেকে গিয়েছে প্রতিশ্রুতিতেই।’
মানুষের চাপে বিডিও বলেছিলেন, পুনর্বাসনের জন্য জমি দেখা হয়েছে। পাশাপাশি সেই মানুষদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। মাসখানেক মিলেছিল রান্না করা খাবার। দুর্গাপুজোর দশমীতে মা বিদায় নিয়েছেন গঙ্গার জলে। প্রশাসনের দেওয়া খাবারও সেদিন থেকে বন্ধ।
আবার আসছে লোকসভা নির্বাচন। রতুয়ার মহানন্দটোলার কান্তটোলা গ্রামের মানুষ জানেন এই নির্বাচনে আরও একবার ইস্যু হবে নদী ভাঙন। গঙ্গা ভাঙন ইস্যু সামনে রেখে প্রচার করবে সব দল। কিন্তু তারা এখন জোটবদ্ধ। নির্বাচনের আগে তারা আবার শুরু করতে চলেছেন পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন। তারা সরাসরি বলছেন, সরকারের উপর আর ভরসা নেই।
কান্তটোলা গ্রামের হরিশ্চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘কয়েক বছর আগে ফসলের জমি তলিয়ে গেছে গঙ্গাগর্ভে। এখন এলাকার বেশিরভাগ মানুষ পরিবারের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে বাইরে কাজ করেন।’
বিধান মণ্ডল, জিতেন মণ্ডলদের বক্তব্য, কান্তটোলা গ্রামের জমি-জায়গা ভিটেমাটি তলিয়ে গেছে নদী গর্ভে। পুনর্বাসনের দাবিতে বিডিও অফিসে গিয়ে আন্দোলন করেছি। প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছিল পুনর্বাসনের জন্য জমি দেখা হয়েছে। মালদা এসে মুখ্যমন্ত্রী তিনিও বলেছিলেন আমাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবেন। সেই আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত বছর ভাঙন চলাকালীন বিভিন্ন দলের নেতা-মন্ত্রীরা এসে আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন। বলেছিলেন, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিবছর বিভিন্ন দলের নেতারা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের ভোট নিয়ে চলে যান। সামনে লোকসভা নির্বাচন। এলাকায় আবার আসবেন বিভিন্ন দলের নেতা-মন্ত্রী ভোট চাইতে। কিন্তু এবার আর তাদের কথায় চিরে ভিজবে না। এবার গ্রামের মানুষরা জোটবদ্ধ হয়েছি। লোকসভা নির্বাচনের আগেই আরও একবার পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলনের পথে হাঁটতে চলেছি।