বালুরঘাট: বিপ্লবের উত্থানে যেন ‘পতন’ অর্পিতার। বালুরঘাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে বিপ্লব মিত্রের নাম ঘোষণা হতেই অন্তরালে একসময়ের দাপুটে নেত্রী অর্পিতা ঘোষ। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ দিনাজপুরের সঙ্গে অর্পিতার যোগাযোগের প্রতিটি মাধ্যমকে কেটে ফেলা হয়েছে।
অন্যান্য পদ আগেই গিয়েছিল। শুধুমাত্র বালুরঘাট কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতির পদে ছিলেন তিনি। সেই সূত্রে জেলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অর্পিতার। কিন্তু প্রার্থী বিপ্লবের নাম ঘোষণা হতেই তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বসানো হয়েছে কুমারগঞ্জের বাসিন্দা, কলকাতার রামমোহন কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক সানোয়ার মোল্লাকে। একসময় বিপ্লবকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে বিজেপিতে যেতে বাধ্য করেছিলেন অর্পিতা। তারই যেন সুমধুর প্রতিশোধ নিলেন বিপ্লব।
বাম আমলে নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর আন্দোলনের পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ। সেই সূত্রে তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ গড়ে ওঠে। সেই সময় মমতার সঙ্গে থাকা বিদ্বজ্জনদের তালিকায় প্রথম সারিতেই ছিলেন তিনি। সেই সুবাদে চোদ্দোর লোকসভা নির্বাচনে বালুরঘাট আসনে তাঁকে প্রার্থী করে তৃণমূল। জয়ীও হন তিনি। কিন্তু উনিশের নির্বাচনের আগে কলকাতার বাসিন্দা অর্পিতার সঙ্গে বিপ্লব মিত্রের বহিরাগত বনাম ভূমিপুত্র ইস্যুর লড়াই বাধে। এতেই বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদারের কাছে হারতে হয় অর্পিতাকে। এই ছায়া যুদ্ধে রাজ্য নেতৃত্ব অর্পিতার পাশে থাকায় দলের জেলা সভাপতির পদ চলে যায় বিপ্লবের। অভিমানী বিপ্লব জেলা পরিষদের ১০ জন সদস্যকে নিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেন। জেলায় শুরু হয় অর্পিতা জমানা।
কিন্তু বিপ্লব মিত্র বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরতেই অর্পিতার জেলা রাজনীতির গ্রাফ নীচে নামতে থাকে। একুশের ভোটের পর বিপ্লবকে মন্ত্রী করা হলেও অর্পিতাকে রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ানো হয়। এই ডামাডোলে অর্পিতার সঙ্গে জেলার সম্পর্ক ছিন্ন হতে শুরু করে। তবে তাঁর অনুগামীদের অনেকেরই আশা ছিল, শেষ পর্যন্ত হয়তো লোকসভা নির্বাচনে অর্পিতাকে ফের এই কেন্দ্রে প্রার্থী করতে পারে তৃণমূল। কিন্তু সেই আশায় জল পড়ে। প্রার্থী হন বিপ্লব।
অর্পিতার বক্তব্য, ‘আমি এখন থিয়েটারে আরও বেশি করে মন দিয়েছি। তাই আমার পক্ষে রাজনীতিতে বেশি সময় দেওয়া এখন সম্ভব নয়। আমি আগেই প্রার্থী হব না বলে দলকে জানিয়ে দিয়েছিলাম।’