রাজু হালদার, গঙ্গারামপুর: রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি সভা-সমিতি, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মাধ্যমে ইতিমধ্যে তেঁতে উঠেছে গঙ্গারামপুর (Gangarampur)। প্রায় সারা বছর গঙ্গারামপুরের বেহাল তাঁত শিল্প (Gangarampur Weaving industry) নিয়ে নেতা-মন্ত্রীদের শব্দ খরচ করতে দেখা না গেলেও, এখন শাসক-বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের মুখে মুখে ফিরছে তাঁত শিল্পের কথা। সেইসঙ্গে বেহাল তাঁত শিল্পের সোনালী যুগ ফেরানোর আশ্বাস দিচ্ছে সব রাজনৈতিক দল। তবে যে কোনও নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক নেতাদের এই চেনা প্রতিশ্রুতিতে ভিজতে নারাজ গঙ্গারামপুরের তাঁতশিল্পীরা।
বুধবার নির্বাচনি জনসভা থেকে গঙ্গারামপুরের বেহাল তাঁতশিল্পের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা (Amit Shah)। বিজেপি ক্ষমতায় এলে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার দই, মুখোশ শিল্পের পাশাপাশি গঙ্গারামপুরের বেহাল তাঁতশিল্পের সুদিন ফিরবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন তৃণমূল জেলা সভাপতি সুভাষ ভাওয়াল। তিনি বলেন, ‘গতকালের নির্বাচনি সভায় এসে অমিত শা বলেছেন, ক্ষমতায় এলে তাঁতের বেহাল দশা ঘুচবে। এতদিন কারা কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল? আসলে এটা লোকসভা না বিধানসভা নির্বাচন তা উনি গুলিয়ে ফেলেছেন। গত পাঁচ বছর ধরে বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ রয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। তারপরও তাঁত শিল্পের এমন বেহাল দশা কেন? তাঁত শিল্প নিয়ে কেন কোনও কাজ করেননি?’
সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা বাম নেতা শতরূপ ঘোষ আবার বলছেন, ‘বিজেপি বলেছে তাঁরা ক্ষমতায় এলে তাঁত শিল্পের উন্নয়ন করবেন, তাহলে অমিত শা এতদিন ক্ষমতায় ছিলেন না?’ শতরূপ এও বলেন, ‘গত লোকসভা নির্বাচনে অমিত শা বলেছিলেন, তারা জিতলে ৩ মাসের মধ্যে সারদার বিচার শেষ করবেন। অপরাধীকে জেলে ঢোকানোর ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু দেখা গেল অপরাধীদের বিজেপির সদস্য করা হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় বিজেপির বেশ কিছু পার্টি অফিস ছাড়া আর কোনও উন্নয়নই হয়নি।’
নীলডাঙ্গা এলাকার তাঁতশিল্পী রতন বসাকের অভিযোগ, ৯০-এর দশকের শেষের দিক থেকে গঙ্গারামপুরের তাঁতের বেহাল দশা শুরু হয়। তারপর থেকেই সরকারি সাহায্য এবং উপযুক্ত বাজার না থাকার কারণে, গঙ্গারামপুরের সমস্ত তাঁত প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেইসময় থেকেই ভোটের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মুখে শুধু এই শিল্পের উন্নয়নের গল্প শোনা যায়। এরপর সারা বছর তাঁরা অদৃশ্য হয়ে যান। ভোটের আগে শুধু প্রতিশ্রুতিই মেলে বলে জানান ঠ্যাঙ্গাপাড়ার তাঁতশিল্পী নিরঞ্জন সরকারও।