শিলিগুড়ি: দমবন্ধ করা ধোঁয়ায় ঢাকল শহর শিলিগুড়ি। গত তিন-চারদিন ধরেই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আবর্জনা পোড়ানোর ফলে ধোঁয়া শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। বৃহস্পতিবার রাতে তা মারাত্মক আকার নেয়। রাত যত বাড়ে তত দমবন্ধ করা পরিস্থিতি তৈরি হয়। ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে ছড়ানো এই ধোঁয়ায় গোটা ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন আশিঘর এলাকার পাশাপাশি পূর্ব বিবেকানন্দপল্লি, হাকিমপাড়া, কলেজপাড়া, সুভাষপল্লি, ডাবগ্রাম, ভারতনগরের বিস্তীর্ণ এলাকা ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। দূষিত ধোঁয়ার ফলে চোখ জ্বালা করতে থাকে। ধোঁয়ার কারণে অনেক প্রবীণের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে শিলিগুড়িতে দূষণের মাত্রা মাঝারি মাপের। সেজন্য শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে বলে পর্ষদের ওয়েবসাইটেই বলা হয়েছে। বেশ কয়েকদিন ধরে শহরে এই ধোঁয়ার কারণে দূষণের মাত্রা অনেকটা বেড়েছে বলে জানা গিয়েছে।
কেন এমন পরিস্থিতি?
প্রতি বছরে শীতের শেষদিকে এক থেকে দু’বার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আগুন জ্বালানোর ফলে কয়েকদিন ধরে এমন ধোঁয়ায় ঢেকে থাকে গোটা শহর। দিনেরবেলা খুব বেশি বোঝা না গেলেও রাতের দিকে ধোঁয়ার ফলে চোখ জ্বালা করতে শুরু করে। হাকিমপাড়ার বাসিন্দা সুলেখা সেনগুপ্তর বক্তব্য, ‘গত কয়েকদিন ধরে দরজা-জানলা খোলা রাখলে ধোঁয়ায় চোখ জ্বলছে। ধোঁয়া এতটাই তীব্র যে ঘরের মধ্যেও স্বস্তি মিলছে না।’
সুভাষপল্লির বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব পরিতোষ সরকারের কথায়, ‘আমি সিওপিডির রোগী। শ্বাসকষ্টের কারণে ভুগছি দীর্ঘদিন ধরে। তার উপর এই ধরনের ধোঁয়ার ফলে প্রতিদিন রাতে জেগে মারাত্মক কষ্ট ভোগ করছি।’
শিলিগুড়ি শহরে এই ধরনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কখনও বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলে আগুন লাগানোর ফলে ধোঁয়ায় ঢেকে যায় শহর। আবার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আগুনে আবর্জনা পোড়ানোর ফলেও মানুষের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। পরিবেশপ্রেমী অনিমেষ বসুর কথায়, ‘আমি বাড়ি ফেরার সময় নিজেরও সমস্যা হচ্ছিল। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই এই সমস্যা হচ্ছে। যাঁদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা রয়েছে তাঁদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। সুস্থ মানুষেরও নাক জ্বালা, চোখ জ্বালা করছে।’ অনিমেষ বলেন, ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ডে তো সারাবছরই আগুন জ্বলতে থাকে। খুব দ্রুত বৃষ্টির প্রয়োজন। গত অক্টোবর মাস থেকে বৃষ্টি নেই। অবিলম্বে বৃষ্টির প্রয়োজন। তাছাড়া এভাবে আগুন লাগলে যাতে দমকলকে দিয়ে দ্রুত আগুন নেভানো হয়, তারও ব্যবস্থা করা দরকার।’
বৃষ্টি না নামলে যে এই পরিস্থিতির সুরাহা হবে না, তা হাড়ে হাড়ে বুঝছেন শহরের আমজনতা। প্রতিবছর শীত শেষের কয়েকদিন শহরের দমবন্ধ পরিস্থিতিতে অনেকে নয়াদিল্লির সঙ্গে তুলনা করছেন।
শিলিগুড়ি পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার বলেন, ‘সন্ধ্যার পর আমাকেও অনেকে ফোন করে এই সমস্যার কথা জানিয়েছেন। কোথা থেকে এই ধোঁয়া আসছে, তা দেখতে হবে। শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসব।’