শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি : শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) তরফে বিভিন্ন সময় নিজস্ব জমি পুনরুদ্ধারের কথা বলা হচ্ছে। অথচ খোদ বোর্ড সদস্যই অম্বিকানগরে রেলের জমি দখল করে ওষুধের দোকান করেছেন। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক বাড়তে শুরু করেছে। বোর্ড সদস্য গৌতম গোস্বামীর দাবি, তাঁর ওই দোকানের জন্য ‘ছাড়পত্র’ দিয়েছিলেন ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির তৎকালীন বিধায়ক গৌতম দেব।
রেলের জমিতে তাদের অনুমতি ছাড়া দোকান করার প্রসঙ্গে বোর্ড সদস্য গৌতমের যুক্তি, ‘বিধায়কের এনওসি থাকলে রেলের আর কোনও অনুমতি লাগে না। রেলের কিছু জায়গা আছে যেখানে বিধায়ক এনওসি দিলেই আর কিছু লাগে না।’ বিষয়টি নিয়ে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ অধিকর্তা সব্যসাচী দে’র পালটা প্রশ্ন, ‘বিধায়ক তো জনপ্রতিনিধি। জনপ্রতিনিধি কোনওদিন কি সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করতে পারেন? এভাবে কোনওদিনই বিধায়ক সরকারি সম্পত্তি হাতবদলে এনওসি দিতে পারেন না। আমরা এ ব্যাপারে আইনত ব্যবস্থা নেব।’
প্রশ্ন আরও উঠছে, সত্যিই যদি এমন কোনও এনওসি প্রাক্তন বিধায়ক দিয়ে থাকেন তাহলে তাতে কী লেখা ছিল? গৌতম গোস্বামীর দাবি, ‘এনওসি-তে পরিষ্কার লেখা ছিল, এলাকার সুবিধার্ধে এই ওষুধের দোকান হলে আমার কোনও আপত্তি নেই।’ কিন্তু তাকে কি রেলের জমিতে দোকান করার ছাড়পত্র বলে ধরে নেওয়া যায়? এই সংক্রান্ত নথিপত্র তাঁর কাছে চাওয়া হলে গৌতম গোস্বামী বলেন, ‘আমি শহরের বাইরে আছি। আমার কাছে সব নথি আছে। দোকান তৈরির জন্য যে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, সমস্তটাই আমার কাছে আছে।’ তবে তাঁর স্বীকার, ‘রেলের কোনও কাগজপত্র আমার কাছে নেই।’
বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বর্তমানে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। তাঁর বক্তব্য, ‘এখন বাইরে রয়েছি। গিয়ে দেখব বিষয়টা কী রয়েছে।’ বোর্ড সদস্যের এহেন কার্যকলাপে জড়াতে চাননি এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, ‘গৌতম গোস্বামী আমাদের এসজেডিএ সদস্য হলেও এটা ওঁর ব্যক্তিগত বিষয়। এব্যাপারে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’
বিষয়টা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন বিজেপির জলপাইগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি বাপি গোস্বামী। তাঁর পরিষ্কার বক্তব্য, ‘ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকায় তৃণমূল নেতারা সমস্ত সরকারি জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য চলছে। আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব। রেলের সঙ্গেও কথা বলব।’
অম্বিকানগর এলাকায় স্থানীয় আন্ডারপাস সংলগ্ন রেলের জমি দখল করে দোকানপাট, বাড়িঘর দীর্ঘদিন ধরেই গজিয়ে উঠেছে। যদিও সে দোকানপাট, বাড়িঘর টিন দিয়ে করা হলেও বিশাল আয়তনের ওই দোকানটি পাকা করেই বানানো হয়েছে। বছর দুয়েক আগে বানানো এই দোকানের সামনের অংশ একেবারে রাস্তা পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রশান্ত দাস ক্ষোভের সুরে বললেন, ‘ওঁরা নেতা মানুষ। ওঁদের জন্য কোনও আইন নেই। যত আইন সব আমাদের জন্যই।’ প্রসঙ্গত, গৌতম গোস্বামীর দাদা সোমনাথ গোস্বামীও রেলের জমিতেই বহুতল বাড়ি বানিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গৌতম গোস্বামীর পালটা বক্তব্য, ‘শুধু আমার ওষুধের দোকানেই ড্রাগ লাইসেন্স সার্টিফিকেট রয়েছে। এলাকার অধিকাংশ ওষুধের দোকানেই ড্রাগ লাইসেন্স নেই। আমাকে যখন ড্রাগ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, সমস্ত কিছু দেখেই দেওয়া হয়েছে।’ আপাতত রেল কী ব্যবস্থা নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন এই এলাকার মানুষজন।