চন্দ্রনারায়ণ সাহা, রায়গঞ্জ : ঘড়ির কাঁটা সকাল এগারোটার ঘরে। একচিলতে কাঠের বাক্সের সামনে ভিড় করে রয়েছে খুদেরা। ওখানেই যে রাখা রয়েছে খাজানা! সাজানো রয়েছে হাঁদা ভোঁদা, নন্টে ফন্টে, বাঁটুল দি গ্রেটের সম্ভার। কে আগে নেবে ম্যাগাজিনগুলো, সুদর্শনপুর দ্বারিকাপ্রসাদ উচ্চবিদ্যাচক্রে সেই নিয়ে শুরু হুড়োহুড়ি। গল্পের বই ছাড়াও পাঠ্যবই, রেফারেন্স বই, গল্পের বই, যা আর কাজে লাগে না, সেগুলোকে লাইব্রেরিতে দেওয়ার জন্য পড়ুয়া ও শিক্ষকরা এগিয়ে এলেন।
পড়ুয়াদের জানার গণ্ডি বাড়াতে স্কুলের তরফে চালু করা হয়েছে লাইব্রেরি। যার পোশাকি নাম ‘বই দাও, বই নাও’। পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্যরকম কিছু পড়ার উৎসাহ জাগাতেই এই উদ্যোগ স্কুল কর্তৃপক্ষের, জানালেন শিক্ষকরা। সরকারি স্কুলগুলোতে পড়ুয়ার সংখ্যা তলানিতে। তাই বলে পড়া কী থেমে থাকবে? তাই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে এই কৌশল চালু করল সুদর্শনপুর দ্বারিকাপ্রসাদ উচ্চবিদ্যাচক্র।
গল্পের বই ছাড়াও পাঠ্যবই, রেফারেন্স বই, গল্পের বই, যা আর কাজে লাগে না, সেগুলোকে লাইব্রেরিতে দেওয়ার জন্য পড়ুয়াদের আহ্বান করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিত্কুমার দত্ত। তাঁর বক্তব্য, ‘এই বছর স্কুলের প্ল্যাটিনাম জুবলি। দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি যে, পড়ুয়াদের স্কুলে আসার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। আমাদের পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ পিছিয়ে পড়া সমাজের। এদের পক্ষে পাঠ্যবইয়ের বাইরের বই কেনা বা পড়া সম্ভব নয়। আশা করছি, এই লাইব্রেরি ওদের সাহায্য করবে।’ তাঁর সংযোজন, ‘শিক্ষক-শিক্ষিকা, পড়ুয়া অনেকের বাড়িতেই অনেক বই পড়ে থাকে। যা হয়তো আর কাজে লাগবে না। সেই বইগুলোকে সকলের সামনে রাখা হয়েছে। যাতে বইয়ের প্রতি ওদের আকর্ষণ তৈরি হয়।’
স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি প্রদীপ আগরওয়ালার বক্তব্য, ‘আমরা চাই, পড়ুয়াদের বন্ধন আরও নিবিড় হোক। বাড়তি বই পড়ে সকলের মানোন্নয়ন হোক। প্রথমদিকে আগ্রহ কম ছিল। এখন নিয়মিত বই দেওয়া, নেওয়া করছে ওরা।’ স্কুলের শিক্ষক গোকুল সরকার জানালেন, ‘বিভিন্ন পুস্তক বিপণি থেকে প্রতি বছর রেফারেন্স বই পাই। সেগুলোর বেশিরভাগই নষ্ট হয়। ওগুলো পড়ুয়াদের কাজে লাগবে।’
তীর্থেন্দু কুণ্ডুর অভিমত, ‘বই পড়ার বিকল্প কিছুই নেই। তাই মোবাইল ফোন না ঘেঁটে ওরা যদি বইয়ের পাতা ওলটায়, তাহলে ভালোই হবে। এখন একটি স্টলে এই দেওয়া নেওয়া চলছে। ওদের আগ্রহ দেখে মনে হচ্ছে, খুব শিগগিরই প্রতি ফ্লোরে একটি করে স্টল বসাতে হবে।’
একাদশ শ্রেণিতে পড়ে অর্কপ্রভ রায়। পছন্দের বইগুলো যাতে ছোটরাও দেখতে পারে, তাহলে ক্ষতি কী? সেই ভেবেই বাড়ি থেকে কিছু ম্যাগাজিন এনেছে ও। তৃপ্তির হাসি হাসতে হাসতে বলল, ‘ছোটবেলায় বিজ্ঞানের এই ম্যাগাজিনগুলো খুব পড়তাম। এখন বাড়িতেই পড়ে থাকে। আজ এনেছিলাম। সবাই ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। ভীষণ ভালো লাগছে।’ বইয়ের দুনিয়ায় আরও মধুর হোক ভাবী প্রজন্মের সফর, আপাতত সেই আশাতেই রয়েছেন সুদর্শনপুর দ্বারিকাপ্রসাদ উচ্চবিদ্যাচক্রের শিক্ষকরা।