জ্যোতি সরকার, জলপাইগুড়ি: রোজা রেখেও কাজে বিরতি নেই মহম্মদ হাবিব, মহম্মদ সাবির, মহম্মদ আমজারদের। হালখাতা ও রামনবমীর খাতা তৈরিতে এখন ব্যস্ত তাঁরা। হালখাতা ও রামনবমীর খাতার চাহিদা যথেষ্টই থাকে। জলপাইগুড়ি শহরের দোকানদাররা তাঁদের কাছ থেকে খাতা কেনেন। হাবিবের ভাই মহম্মদ সাবির বলেন, ‘দিনের বেলা তো বটেই, রাতজেগে খাতা তৈরির কাজ চলে। এক মাসের বেশি জলপাইগুড়িতে থাকতে হয় এই সময়। প্রতিবার আমরা আসি। কখনও মনে হয় না বাড়ির বাইরে আছি। সম্প্রীতির আদর্শ শহর জলপাইগুড়ি।’
১৪ মার্চ থেকে জলপাইগুড়ি শহরে দিনবাজারের শাহ ধর্মশালায় রয়েছেন তাঁরা। ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন। হাবিবের ছেলে মহম্মদ আমজারের কথায়, ‘খাতার দাম ১০০ থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা। বিক্রি ভালোই। প্রতিদিন নতুন মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। এটাও বড় প্রাপ্তি।’ জলপাইগুড়ি নিউটাউনপাড়ার রাজা রায় জানালেন, ‘হাবিব চাচার হালখাতা খাতার কদর যথেষ্ট। আমরা প্রতি বছর অপেক্ষায় থাকি, কবে হাবিব চাচা আসবেন।’ হাবিবরা পাঁচপুরুষ ধরে বিহারের মুজফফরপুর থেকে জলপাইগুড়িতে আসছেন।
জলপাইগুড়িতে আসার প্রায় তিন মাস আগে তাঁরা কলকাতা থেকে কাগজ নিয়ে যান মুজফফরপুরে। কিছু খাতা তৈরি হওয়ার পর জলপাইগুড়িতে এসে বাকি কাজ করেন। হাবিব বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১০ বছর, তখন বাবার হাত ধরে খাতা বিক্রি করতে এই শহরে আসতাম। তারপর আর ছেদ পড়েনি। এখন আমার বয়স ৭১। আমার সঙ্গে ভাই ও ছেলে এসেছে। সকাল হলেই খাতা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। সকাল ১০টার পর ছেলে দিনবাজারে খাতা বিক্রি করতে রাস্তার পাশে বসে।’
তাঁর কথায়, ‘জলপাইগুড়ির মানুষের ব্যবহার অপূর্ব। তাঁরা আমাদের সবসময় উৎসাহিত করেন।’ প্রতিদিন রোজা ভাঙার পর শাহ ধর্মশালায় নিরামিষ খাবার তৈরি করেন নিজেরাই। ১লা বৈশাখ ও রামনবমীতে দিনবাজার ও সংলগ্ন এলাকার প্রতিটি দোকানে প্রসাদ খান।