রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ির বড় বড় ব্যবসায়ী এবং সরকারি আধিকারিকদের কাছে স্থানীয় ও ভিনরাজ্যের মহিলাদের জোগান দেওয়ার অভিযোগে সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে বাগডোগরা এলাকার বাসিন্দা নিমা লামা নামে ওই শিক্ষক গ্রেপ্তার হয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি) এবং প্রধাননগর থানার পুলিশ যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত বাগডোগরা সরস্বতী হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত। বুধবার তাকে শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে তুলে সাতদিনের হেপাজতে নিয়েছে পুলিশ।
শিলিগুড়ির দাগাপুরের কাছে একটি রিসর্টে মধুচক্র মামলায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃতের বিরুদ্ধে মানব পাচার ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশের এডিসিপি সুভেন্দ্র কুমার বলেন, ‘অভিযুক্ত স্কুলের শিক্ষক। শহরে মানব পাচারে সিদ্ধহস্ত এই ব্যক্তি। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’ শিলিগুড়ির বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) তরুণকুমার সরকার বলেন, ‘আমার বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’
গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানার দাগাপুর এলাকার একটি রিসর্টে হানা দিয়ে মধুচক্র চালানোর অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। ঘটনায় বিহারের দুই যুবক গ্রেপ্তার হয়েছিল। সেই তদন্তে একের পর এক নাম উঠে আসে। মাঝে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, বাগডোগরার এক স্কুল শিক্ষক এই কাজে যুক্ত রয়েছে। সেইমতো তার বিরুদ্ধে তথ্য জোগাড় শুরু করে প্রধাননগর থানার পুলিশ। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, অভিযুক্তের মাটিগাড়ায় একটি স্পা রয়েছে। ওই স্পার ব্যবসার আড়ালেই সে শহরের ওপরমহলের লোকজনের কাছে মহিলাদের জোগান দিত। জেলার অনেক বড় সরকারি আধিকারিকের সঙ্গেও এই ব্যক্তির যোগাযোগ রয়েছে।
পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই সরকারি আধিকারিকদের অনেকের কাছে মেয়েদের পৌঁছে দিত অভিযুক্ত ব্যক্তি। এর পাশাপাশি বড় ব্যবসায়ী ও উঁচু পদে চাকরি করা অনেকের কাছেও মহিলা জোগান দেওয়া হত। শিলিগুড়ি শহর নয়, সিকিম, নেপাল, ভুটান, কলকাতা, বেঙ্গালুরু সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে যুবতীদের শিলিগুড়িতে এনে ক্লায়েন্টদের কাছে পৌঁছে দিত অভিযুক্ত। শহরের যুবতী হলে কম টাকা লাগত। কিন্তু ভিনরাজ্য বা ভিনদেশের মহিলা হলে মোটা টাকা নেওয়া হত। মাটিগাড়ার বিভিন্ন স্পার আড়ালে দেহব্যবসার জন্যও মহিলাদের আনা হত।
কিছুদিন আগে একই মামলায় স্যান্ডি নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। ওই স্যান্ডির মাধ্যমেই সমস্ত কাজ চালাত ওই স্কুল শিক্ষক। শহরের মাটিগাড়ার একটি শপিং মলের পাশাপাশি ওই মলের পাশের উপনগরী, শহরের বড় বড় হোটেলেও মহিলাদের জোগান দিত অভিযুক্ত। এর বাইরে তার জমির দালালির ব্যবসাও ছিল।
এই কাজে যাতে কোনও বাধা না পড়ে তার জন্যে শহরের বড় বড় সরকারি আধিকারিকদের কাছে মোটা টাকা মাসোহারা পৌঁছে দিত অভিযুক্ত। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। কোন কোন সরকারি আধিকারিক এবং ব্যবসায়ীর সঙ্গে অভিযুক্তের যোগ রয়েছে তার খোঁজ করছে প্রধাননগর থানার পুলিশ।