মহম্মদ আশরাফুল হক, গোয়ালপোখর: লোকসভা ভোট এসে গিয়েছে। কিন্তু এখনও বেহাল গোয়ালপোখর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্যতম গোয়াগাঁও-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে সরকারি পরিষেবা। এই পঞ্চায়েত কার্যত রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা উন্নয়নমন্ত্রী গোলাম রব্বানির খাসতালুক। কিন্তু এখানে সরকারি পরিষেবা না মেলার তালিকা লম্বা। রয়েছে একটি প্রাথমিক ও তিনটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু সেগুলির পরিষেবা নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে লাগামহীন ক্ষোভ। বেহাল রাস্তাঘাট, অমিল পানীয় জল। রয়েছে কর্মতীর্থও। তথাপি বেকারদের কর্মসংস্থান হয়নি। লোকসভা ভোটের মুখে এসব নিয়ে এলাকার মানুষজন খুবই বিরক্ত। এনিয়ে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দীপালি সিনহা কিংবা খোদ মন্ত্রী কেউই মুখ খোলেননি।
গোয়ালপোখর-১ ব্লকের শেষ সীমানায় গোয়াগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েত। চাকুলিয়া থেকে জনতাহাট হয়ে গোয়াগাঁও ঢুকলেই সামনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। কিন্তু সেখানে ডাক্তার নেই। স্বাস্থ্যকর্মীরাই রোগী দেখেন। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে সেখানে চালু হয়েছিল ইন্ডোর বিভাগ। এখন বন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দা ফণেশচন্দ্র সিংহের কথায়, ‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে ২০১২ সাল থেকে আন্দোলন চলছে। মানুষকে বোকা বানাতে ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ইন্ডোর চালু হয়েছিল। ভোট শেষ, সেই পরিষেবাও বন্ধ। বর্তমানে এখানে স্বাস্থ্য পরিষেবার কিছুই অবশিষ্ট নেই। সর্দি-কাশি ছাড়া অন্য ওষুধ মেলে না। চিকিৎসার অভাবে বহু মানুষ অকালে প্রয়াত হয়েছেন।’ গ্রাম পঞ্চায়েতের আওতায় গোয়াগাঁও, বনগাঁও, চাপোয়ায় তিনটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হয়েছে। সেগুলির পরিষেবাও সন্তোষজনক নয়। কেউই কোনও খোঁজখবর নেন না। পঞ্চায়েতের জাবরা বস্তিতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর পরিস্রুত পানীয় জলের রিজার্ভার বসিয়েছে। খররা, বগলাডাঙ্গি, ভগবানপুর, নাজিরপুর, গোয়াগাঁও, সেরনিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ছিপি গ্রামে জলের পাইপলাইনের সংযোগ রয়েছে। এগুলি বাম আমলে তৈরি। জাবরা বস্তির আনসার আলম বলেন, ‘গ্রামে গ্রামে জলের পাইপলাইন বসলেও পরিষেবা অমিল। একবার জলের পাইপ ফাটলে মাসাধিককাল পড়ে থাকে। অভিযোগ জানালে নানা অজুহাত দেখানো হয়। অনেক গ্রামে পাইপলাইন থাকলেও পরিস্রুত পানীয় জল মেলে না।’ রাজ্যের কোথাও না থাকলেও উত্তর ছিপি থেকে খররা মোড় অবধি সাড়ে তিন কিমি রাস্তা এখনও মাটির। আগের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মালতী সিংহের দাবি, ‘গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি সে সময় অর্থাভাবে করতে পারিনি।’ স্থানীয় বাসিন্দা তপন সিংহ জানান, কোনিয়াভিটা থেকে পিডব্লিউডি রোড অবধি দু’কিমি রাস্তা বহুদিন ধরে বেহাল। দুর্ঘটনা নিত্যসঙ্গী। মন্ত্রীর খাসতালুক গোয়াগাঁওয়ে বহু খারাপ রাস্তার সংস্কার হয়নি। তিন কোটিতে কর্মতীর্থ তৈরি হলেও বেকারদের কর্মসংস্থান হয়নি। পল্লবী সাহা, রেহানা সুলতানার দাবি, জনপ্রতিনিধিরা বেকার সমস্যা বোঝেন না। ভোটের আগে শুধু প্রতিশ্রুতি দেন। পরে খোঁজ রাখেন না।