শিলিগুড়ি, ৩০ এপ্রিল : পারদ চড়তেই চাপ বাড়তে শুরু করেছে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে। সকাল থেকেই হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন পড়ছে। পাশাপাশি জ্বর, সর্দি, কাশি, পেটের সমস্যা নিয়ে অনেকে হাসপাতালে ভর্তিও হচ্ছেন। গত দু’দিনে ৫০ জনেরও বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। তাঁদের মধ্যে ৪০ শতাংশ জ্বর, কিংবা পেটের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। বহির্বিভাগগুলিতে গত দু’দিনে চিকিৎসা করাতে এসেছেন এক হাজারেরও বেশি রোগী।
আবহাওয়া দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিন রোদের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। তাই কোনওরকম ঝুঁকি না নিয়ে সমস্ত আপৎকালীন ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জরুরি বিভাগের কাছে বেডের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের সতর্ক করা হয়েছে। যদিও হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এখনও কোনও রোগী শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি হননি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সুপার চন্দন ঘোষের বক্তব্য, ‘আমরা সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। দক্ষিণবঙ্গে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এখানে এখনও সেরকম কিছু হয়নি। তবে জ্বর, সর্দি, কাশি, পেটের সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসছেন।’
ফকদইবাড়ির বাসিন্দা শেফালি সরকার ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। তিনি বলছেন, ‘ছেলের হঠাৎ পেট ব্যথা আর বমি হচ্ছে। তাই হাসপাতালে দেখাতে নিয়ে এসেছি।’ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়লা ডিপো এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ আলম। তাঁর কথায়, ‘দু’দিন ধরে জ্বর। পাশের ওষুধের দোকানে বলে ওষুধ খেয়েছিলাম, কমেনি। তাই আজ হাসপাতালে এসেছি।’
চলতি বছর গরম সমস্ত রেকর্ড পার করে দেবে বলে আগেই আভাস দিয়েছিল আবহাওয়া দপ্তর। সেইমতো দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে পারদ ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। উত্তরেও তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ ডিগ্রিতে ঘোরাফেরা করছে। এই পরিস্থিততে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর সমস্ত জেলায় বিশেষ নির্দেশিকা পাঠিয়েছে। নির্দেশিকা অনুযায়ী সমস্ত সরকারি হাসপাতালে দুটি করে নির্দিষ্ট বেড রাখতে হবে হিটস্ট্রোকের রোগীদের জন্যে। হিটস্ট্রোকের রোগীরা এলে কীভাবে কাজ করতে হবে তা নিয়ে মক ড্রিল করার পাশাপাশি ঠান্ডা জল, বরফ রাখতে বলা হয়েছে। সেইমতো শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল সমস্ত প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশেই তিনটি বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাখা হয়েছে ঠান্ডা জল ও বরফ।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসা বেশিরভাগেরই হয় জ্বর নয়তো পেটের সমস্যা রয়েছে। জ্বরের সঙ্গে সর্দি, কাশি থাকছে। পেটের সমস্যার সঙ্গে বমিও হচ্ছে। বিশেষ করে মহিলা রোগীরা বেশি আসছেন। পাশাপাশি শিশুদেরও একই উপসর্গ দেখা যাচ্ছে ধরা পড়ছে। ঘোগোমালি পাইপলাইনের বাসিন্দা রিতা ধর এদিন বহির্বিভাগে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বললেন, ‘শরীর দুর্বল লাগে। খেতে পারি না। তাই মা ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছে। বাইরে আসার সময়ে গরমে আরও নাজেহাল হয়ে পড়েছি।’
এই দহনজ্বালা থেকে মুক্তি কবে মিলবে আকাশের দিকে চেয়ে সেই উত্তরই যেন খোঁজার চেষ্টা করছিলেন তাঁর মতো প্রত্যেকে।