সানি সরকার, শিলিগুড়ি: পর্যটনের ভরা মরশুমে প্রায় সাতদিন ধরে বন্ধ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক (NH 10)। যার ফলে সিকিম (Sikkim) ও কালিম্পংয়ের (Kalimpong) সঙ্গে শিলিগুড়ির (Siliguri) সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। পাশাপাশি এর প্রভাব পড়ছে পাহাড়ি পর্যটনে (Hill Tourism)। যা নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। এমনকি আন্দোলনের চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের (Tourism Business) সংগঠন। যদিও জেলা প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্য, লাগাতার ধস (Landslide) নামছে। আর এই কারণে রাস্তা চওড়া করতে পাহাড় কাটার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শনিবার থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার জন্য যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে রাস্তাটি ফের চালু হওয়ার কথা। এই দু’দিন লিখুভিরে সংকীর্ণ রাস্তা চওড়া করার জন্য পাহাড় কাটবে পূর্ত দপ্তর। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে যেভাবে রাস্তাটি খুলছে এবং বন্ধ হচ্ছে, তাতে কেউই নিশ্চিত হতে পারছেন না যে সোমবারের পর যখন আবার খুলবে, তা কয়েকদিনের মধ্যেই ফের বন্ধ করে দেওয়া হবে কি না।
গতবছর অক্টোবর মাসে সাউথ লোনাক লেক বিপর্যয়ের পর জাতীয় সড়কটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। গত সপ্তাহে টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় লিখুভির এবং রবিঝোরায় বিপর্যয় দেখা দেয়। ন্যাশনাল হাইওয়েটি কে মেরামত করবে, কেন্দ্রীয় সংস্থা ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড নাকি রাজ্যের পূর্ত দপ্তর, তা নিয়েও জটিলতা রয়েছে। কিন্তু এখনই এব্যাপারে কেউ মাথা ঘামাতে চাইছেন না।
বিপর্যয়ের পর প্রায় ছয় মাস কেটে গেলেও রাস্তাটি কেন চলাচলের যোগ্য করে তোলা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। সিকিমের একটি ওষুধ কোম্পানির কর্মী বিপ্লব রায়চৌধুরী বলেন, ‘কেন্দ্র বা রাজ্য, কে রাস্তার কাজ করবে, সেটা আমরা ভাবতে যাব কেন? একটা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দিনের পর দিন বন্ধ থাকছে, এটা বর্তমান যুগে ভাবাই যায় না।’
এখন পর্যটনের ভরা মরশুম। জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না পর্যটন ব্যবসায়ীরাও। রাস্তাটি বন্ধ থাকায় যেমন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে, তেমনই পর্যটকদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে তাঁদের। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ঘুরপথে যাতায়াত করতে হচ্ছে বলে খরচ বাড়ছে। যেহেতু প্যাকেজ ট্যুরের মধ্যে দিয়ে অধিকাংশ পর্যটক বেড়াতে আসেন, তাই তাঁদের মধ্যে অনেকেই বাড়তি টাকা দিতে চাইছেন না।
গ্যাংটকের পর্যটন ব্যবসায়ী লাকপা শেরপা বলেন, ‘শুধু সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে তাই নয়, এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে চলেছে।’ রাস্তাটি এমনভাবে দিনের পর দিন বন্ধ থাকায় আন্দোলন নিয়ে ভাবছে হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘শুধু পর্যটক বা আমাদের সমস্যা হচ্ছে, তা নয়। প্রচুর সাধারণ মানুষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সোমবারে রাস্তা খুলে দেওয়া না হলে সংগঠনের তরফে আন্দোলনে নামা হবে।’ বন্ধ জাতীয় সড়ক তাঁদের রোজগারে থাবা বসিয়েছে বলে জানান তিস্তা-রঙ্গিত র্যাফটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রমোদ ছেত্রী।