সমীর দাস, হাসিমারা, ২৫ মে : ৪৮ নম্বর এশিয়ান হাইওয়ের তোর্ষা নদী সংলগ্ন পার মালঙ্গি বস্তিতে গত কয়েক বছরে গজিয়ে উঠেছে একাধিক হোটেল ও রিসর্ট(Resort)। তার কয়েকটিতে রমরমিয়ে চলছিল মধুচক্র। পুলিশের রাডারে ছিল অবৈধ মধুচক্র(Honeytrap)। শুক্রবার রাতে ওই এলাকার দুটি রিসর্টে আচমকা হানা দেয় হাসিমারা(Hasimara) ফাঁড়ি ও জয়গাঁ থানার পুলিশ। দুটি রিসর্ট থেকে পাঁচজন তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। দুটি রিসর্টের দুই কর্মীকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি পাঁচ খদ্দেরকে দুটি রিসর্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার উদ্ধার করা তরুণী ও গ্রেপ্তার হওয়া রিসর্টকর্মী ও পাঁচ খদ্দেরকে আলিপুরদুয়ার মহকুমা আদালতে তোলা হয়েছে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন বীরপাড়ার সার্কেল ইনস্পেকটর শুভজিৎ সিংহ। সঙ্গে ছিলেন জয়গাঁর এসডিপিও প্রশান্ত দেবনাথ, জয়গাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত ইনস্পেকটর পালজের ভুটিয়া, হাসিমারা পুলিশ ফাঁড়ির ওসি বিশ্বজিৎ দে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রিসর্ট মালিক ও ম্যানেজাররা পলাতক। তাদের খোঁজ করছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, ধৃত তরুণীরা কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা। ধৃত খদ্দেরদের বাড়ি হাসিমারার সাতালি, বিচ চা বাগান ও আলিপুরদুয়ারে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রিসর্ট কর্তৃপক্ষ বাইরে থেকে তরুণীদের এনে খদ্দেরদের ফোন করে হোটেলে ডাকত। এরপর যার যাকে পছন্দ তার সঙ্গে রাত কাটানোর সুযোগ মিলত। কেউ কেউ আবার কয়েক ঘণ্টা তরুণীদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে চলে যেত। পরিচয় গোপন রাখার জন্য রিসর্টের রেজিস্টারে কারও নাম পরিচয় বা পরিচয়পত্র জমা নেওয়া হত না। গতকয়েক বছরে এই রিসর্ট মালিকরা এই ধরনের অবৈধ কারবার করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছে। সূত্রের খবর, এক একজন তরুণীর জন্য রিসর্ট কর্তৃপক্ষ পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা খদ্দেরদের থেকে আদায় করত। তার একাংশ ভাড়া করা তরুণীদের হাতে দিয়ে বাকিটা নিজেদের পকেটে পুরে নিত।
ওই এলাকার রিসর্টগুলোতে পর্যটকদের খুব বেশি আনাগোনা নেই। তবে সন্ধ্যার পর সেখানে শুরু হয়ে যেত দেহ কেনাবেচার রমরমা ব্যবসা। বাইরের খদ্দের এলে তাঁদের তরুণীদের দিয়ে টোপ দেওয়া হত। টোপে পা দিলে দর উঠে যেত ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকার রিসর্টগুলো মধুচক্রের জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছিল। পুলিশের কাছেও অবৈধ দেহব্যবসার অভিযোগ জানিয়েছেন অনেকেই। এরপর পুলিশ ওই এলাকার রিসর্টগুলোতে নজরদারি শুরু করে। অবশেষে শনিবার সন্ধ্যায় তরুণীরা এলে খদ্দেরদের আগমন শুরু হয়। তখনই ওঁত পেতে থাকা পুলিশ অভিযান শুরু করে। রিসর্ট দুটির পৃথক ঘর থেকে তরুণী ও খদ্দেরদের হাতেনাতে ধরে ফেলে পুলিশ। জয়গাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত ইনস্পেকটর পালজের ভুটিয়া জানিয়েছেন, মধুচক্র বন্ধ করতে বিভিন্ন এলাকায় লাগাতার অভিযান চলবে। কোনও হোটেল বা রিসর্টে যাতে এই ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ না চলে তার জন্য পুলিশ সবদিকে নজর রাখছে।