জলপাইগুড়ি: ‘ভয় ভীতি প্রদর্শন করছেন পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায় (Saikat Chatterjee) এবং তাঁর অনুগামীরা।’ এই অভিযোগ এনে শনিবার জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) পান্ডাপাড়ার বাড়ি ছেড়ে মাসির বাড়ি চলে গেলেন প্রয়াত সুবোধ ভট্টাচার্য এবং অপর্ণাদেবীর একমাত্র মেয়ে তানিয়া। পান্ডাপাড়ায় (Pandapara) নিজের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণ বিস্তারিতভাবে পুলিশ এবং প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন তিনি।
ভট্টাচার্য দম্পতির আত্মহত্যার ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল সৈকত চট্টোপাধ্যায় সহ মোট চারজনের বিরুদ্ধে। তদন্ত শেষ করে ইতিমধ্যে পুলিশ চার্জশিট দাখিল করেছে। এই মামলায় চারজনই বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন। জলপাইগুড়ি পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপত বলেন, ‘মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। যে কারণে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’
সৈকত বলেন, ‘জলপাইগুড়িতে লোকসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকেই আমি বিভিন্ন প্রার্থীর হয়ে প্রচারের জন্য কলকাতায় রয়েছি। প্রতিদিন আমি যা দলীয় প্রচার করছি তা সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট হচ্ছে। উনি না জেনেই ওঁর আইনজীবী এবং বিজেপির কথাতেই আমার বিরুদ্ধে এই ধরনের মিথ্যে অভিযোগ করছেন বলে মনে হয়।’
২০২৩ সালের ১ এপ্রিল পান্ডাপাড়ার নিজের বাড়িতে আত্মহত্যা করেছিলেন ভট্টাচার্য দম্পতি। সেই সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছিল পুলিশ। যেখানে তঁারা আত্মহত্যায় প্ররোচনার জন্য সৈকত চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপ ঘোষ, মনোময় সরকার এবং সোনালি বিশ্বাস নামে এক মহিলার নাম লিখেছিলেন। ঘটনার পর মৃতের দিদি তথা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় সুইসাইড নোটে উল্লেখ থাকা চারজনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে প্রত্যেকেই আত্মসমর্পণ করেন এবং গ্রেপ্তার হন। সৈকত বেশ কয়েক মাস পালিয়ে থাকার পর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। জেল হেপাজতে থাকার পর অভিযুক্তদের প্রত্যেকেই জামিনে মুক্তি পান। অন্যদিকে, পুলিশও এই মামলা তদন্ত শেষ করে চার্জশিট পেশ করেছে। যেখানে সৈকত সহ বাকিদের নাম উল্লেখ রয়েছে।
নিম্ন আদালতে সৈকতের জামিনের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোটের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে একটি মামলা দায়ের করেন শিখা চট্টোপাধ্যায়। এই মামলাটিও বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে হাইকোর্টে। এই পরিস্থিতিতে এদিন পান্ডাপাড়ার নিজের বাড়ি ছেড়ে ফাটাপুকুরে মাসির বাড়ি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ভট্টাচার্য দম্পতির একমাত্র কন্যা তানিয়া। যাওয়ার আগে তিনি জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় ও পুলিশ সুপারের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দিেয়ছেন। জেলা শাসকের দপ্তর এদিন বন্ধ থাকায় ডাকযোগে তিনি জেলা শাসককে বিষয়টি জানিয়েছেন।
তানিয়া বলেন, ‘বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর এই বাড়িতে আমি একা হয়ে গিয়েছি। আমার একা থাকার সুযোগ নিয়ে সৈকত চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর অনুগামীরা নিয়মিত আমাকে নানাভাবে ভয় দেখাচ্ছেন। আমি যথেষ্টই আতঙ্কে রয়েছি। এই বাড়িতে আমার একা থাকা যথেষ্ট বিপজ্জনক। যে কারণে আমি বাড়ি ছেড়ে মাসির বাড়ি চলে যাচ্ছি। আমার এই বাড়ি বর্তমানে তালা মারা থাকবে। আমার অনুপস্থিতিতে যাতে বাড়ি ও সম্পত্তি কেউ দখল করতে না পারে তার জন্য আমি চলে যাওয়ার বিষয় বিস্তারিতভাবে পুলিশ এবং প্রশাসনকে জানিয়ে গেলাম।’