ফালাকাটাঃ সতর্ক করা হয়েছে বহুবার। এর পরেও হুঁশ ফেরেনি পরীক্ষার্থীদের। নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পরীক্ষার হলে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করেছিল চার ছাত্রী। ধরা পড়তেই অভিযুক্ত ছাত্রীদের পরীক্ষা বাতিল করল উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে ফালাকাটা শহরের পারঙ্গেরপার শিশু কল্যান হাই স্কুলে। এই স্কুলে ময়রাডাঙ্গা গোপ্পু মেমোরিয়াল হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সিট পড়েছিল। একই স্কুলের চার ছাত্রীর পরীক্ষা বাতিল হওয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন বলেই জানিয়েছে শিক্ষা সংসদ।
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য সফিউর রহমান বলেন, এদিন পরীক্ষা চলাকালীন ৪ ছাত্রীর থেকে মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বোর্ডের নির্দেশ মতো ওই চার ছাত্রীর পরীক্ষা বাতিল হচ্ছে। জেলা থেকে গোটা ঘটনা সংসদকে জানানো হয়েছে।
পারঙ্গেরপার শিশু কল্যান হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ডা: প্রবীর রায় চৌধুরী বলেন, পরীক্ষার্থীদের স্কুলে ঢোকার আগেই সতর্ক করা হয়। এমনকি ছাত্রদের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে সার্চ করে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকানো সহজ হলেও ছাত্রীদের ক্ষেত্রে সেভাবে করা সম্ভব নয়। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই কেউ কেউ এই অপকর্ম করছে। তবুও এদিন আমরা সতর্ক থাকাতেই ছাত্রীদের থেকে মোবাইল উদ্ধার করতে পেরেছি।
বুধবার ছিল উচ্চমাধ্যমিকের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষা। ফালাকাটা শহরের পারঙ্গেরপার হাই স্কুলে সিট পড়েছে ময়রাডাঙ্গা গোপ্পু মেমোরিয়াল হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের। এই স্কুলে গোপ্পু মেমোরিয়াল হাই স্কুলের ২২১ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। অন্যদিনের মতো এদিনও সুষ্ঠুভাবেই পরীক্ষা শুরু হয়। তবে পরীক্ষা শুরুর ১ ঘন্টা ২০ মিনিট পর ময়রাডাঙ্গা গোপ্পু মেমোরিয়াল হাই স্কুলের এক ছাত্রী টয়লেটে যাবে বলে জানান। ইনভিজিলেটর তাকে টয়লেটে যাবার অনুমতি দেন। তবে সময় অনেকটা হয়ে যাওয়ায় ইনভিজিলেটরের সন্দেহ হয়। তিনি টয়লেটের দিকে এগিয়ে যান। তখনই শুনতে পান ওই ছাত্রী মোবাইল ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছে। এর পর ছাত্রী টয়লেট থেকে বের হতেই তাকে ধরে ফেলেন ইনভিজিলেটর। দ্রুত তিনি বিষয়টি ভেনু সুপারভাইজার সহ অন্যদের জানান।
এদিকে সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রী পরীক্ষা রুমে বসেই রাষ্ট্র বিজ্ঞানের প্রশ্ন হোয়াটসঅ্যাপ করে কাউকে পাঠিয়েছিল। তবে সেটি ডেলিভার্ট না হওয়াতেই সে টয়লেটে চলে গিয়েছিল। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হতেই সংসদের দায়িত্ব প্রাপ্তরা স্কুলে পৌঁছে যান। তাদের নির্দেশে গোটা পরীক্ষা রুমেই ছাত্রীদের কড়াভাবে সতর্ক করা হয়। এমনকি কারও কাছে মোবাইল আছে নাকি তা দেখার চেষ্টাও করেন শিক্ষিকারা। তখনই একই রুম থেকে আরও ৩ জন ছাত্রীর হেপাজত থেকে স্মার্টফোন উদ্ধার হয়। এর পরেই ওই ৪ ছাত্রীকে আলাদাভাবে প্রধান শিক্ষকের ঘরে নিয়ে আসা হয়। খবর দেওয়া হয় অভিভাবকদের। কিন্তু পরিবারের কেউ না আসায় তাদের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করে সংসদ।
সংসদ সূত্রে খবর, ৪ ছাত্রীর পরীক্ষাই বাতিল করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম যে ছাত্রীকে ধরা হয়েছিল তার আগামী বছরও পরীক্ষা বাতিল হতে পারে। তবে বাকি ৩ জনের আজকের পরীক্ষা বাতিল হচ্ছে। এদিকে ফালাকাটার মতো জায়গায় একই স্কুলের চার ছাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধারের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। গত ২৩ তারিখ জেলার পার্শ্বনার্থ হাই স্কুলে রুমে মোবাইল ফোন নিয়ে আসার অপরাধে ২ জনের পরীক্ষা বাতিল হয়েছিল। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বুধবার ফালাকাটায় ৪ জন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী একই অপরাধে ধরা পড়ল। পরীক্ষার হলে এভাবে পরীক্ষার্থীদের মোবাইল নিয়ে আসার প্রবনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিন্তিত শিক্ষামহল।