মুর্শিদাবাদ: কংগ্রেস, বিজেপি হয়ে যোগদান করেছিলেন তৃণমূলে। ভরতপুর কেন্দ্র থেকে জিতেওছিলেন। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ফের ‘বিক্ষুব্ধ’ মুর্শিদাবাদের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। এবার তাঁর সঙ্গে রয়েছেন জেলার আরও ৩ তৃণমূল বিধায়ক রেজিনগরের রবিউল আলম চৌধুরী, নওদার শাহিনা মমতাজ এবং জলঙ্গির আব্দুর রজ্জাক। সকলেরই অভিযোগ, দলের জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতে টিকিট বিলিতে অনিয়ম নিয়ে। দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অনুগামীদের প্রার্থী করে লড়াইয়েরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এই বিধায়করা।
বৃহস্পতিবার বেলডাঙ্গার তৃণমূল দপ্তরে হুমায়ুন বলেন, ‘বিরোধী প্রতীকে জয়ী হয়েও ৩ মাসের মধ্যে তৃণমূলে জায়গা হয়েছে বায়রন বিশ্বাসের! আমরাও তৃণমূলে থেকে নির্দল প্রার্থী দিয়ে প্রয়োজনে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ করব।’ হুমায়ুন অভিযোগ করেন, তাঁর মনোনীত মাত্র ১০ শতাংশ প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছে দল। হুমায়ুনের সঙ্গে সেইসময় উপস্থিত ছিলেন আরও ৩ বিক্ষুব্ধ তৃণমূল বিধায়ক।
রেজিনগরের বিধায়ক রবিউলের অভিযোগ, বেশির ভাগ জায়গায় বিধায়কদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থীদের ভোটে দাঁড় করাবেন। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, যে প্রধানরা লক্ষ লক্ষ টাকা চুরি করেছেন, তাঁরাই প্রার্থী হয়েছেন!’ ৪ বিক্ষুব্ধ বিধায়কই মুর্শিদাবাদ-বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা কান্দির বিধায়ক অপূর্ব (ডেভিড) সরকার এবং দলের জেলা সভাপতি শাওনি সিংহরায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। শাওনিকে ‘হেরো প্রার্থী’ বলে কটাক্ষ করে হুমায়ুন বলেন, ‘যাঁদের নিজেদের জেতার ক্ষমতা নেই, তাঁরাই আবার ইচ্ছামতো প্রার্থী করছেন!’
নওদার বিধায়ক শাহিনা শাওনিকে নিশানা করে বলেন, ‘২৪ ঘণ্টা আগে সভাপতি যা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা উলটো হয়ে যাচ্ছে! এই হঠকারিতার কোনও মানে হয় না।’ জলঙ্গির বিধায়ক আব্দুর রজ্জাকের বক্তব্য, ‘বিরোধীরা প্রার্থী দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল এখনও প্রার্থী ঠিক করতে পারছে না। এইভাবে দল চললে লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির আশঙ্কা রয়েছে।’ বৈঠক শেষে ৪ বিধায়ক জানান, তৃণমূল নেতৃত্ব যাঁদের টিকিট দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কাটমানি, তোলাবাজি, দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দল যদি তাঁদের নিয়ে রাজনীতি করার কথা ভাবে, তা হলে আগামীতে তাঁরাও ‘নতুন করে ভাববেন’। যদিও চার বিধায়কের মন্তব্য প্রসঙ্গে কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকারের বক্তব্য, তৃণমূল বড় দল। তার মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতেই পারে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত সকলকে মানতে হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের পঞ্চায়েতের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়েছে। এরপর এদিন সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কার্যত দলের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করলেন এই বিধায়করা। যদিও দল ছাড়ার সম্ভাবনা খারিজ করে করে দিয়ে হুমায়ুনরা জানিয়েছেন, তাঁরা তৃণমূলেই থাকবেন।