ধূপগুড়ি: ঠিক যেন ‘হম দিল দে চুকে সনম’। আবার ঠিক যেন তা নয়। ওই সিনেমায় শেষপর্যন্ত স্বামী অজয় দেবগণই জিতে গিয়েছিলেন। সলমন খানের আর প্রেমিকা ঐশ্বর্যকে রাইকে পাওয়া হয়নি। ধূপগুড়ি রেলস্টেশন সংলগ্ন বারোঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চলের ভেমটিয়ার ঘটনাটি অবশ্য উলটো। স্ত্রী আরেকজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন। স্বামী তাই ১০ জনকে সাক্ষী রেখে ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে লিখিত চুক্তি করে স্ত্রীকে তাঁর প্রেমিকের হাতে তুলে দিলেন। চুক্তি অনুসারে, বছর তিনেকের সন্তান অবশ্য স্বামীর কাছেই থাকবেন। পাঁচ বছরের বিয়ে। স্ত্রীর সঙ্গে তারও দুই বছর আগে থেকে চেনাশোনা। সেই মানুষটিকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার পর তরুণ স্বামী স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েছেন। তবুও বললেন, ‘চিরকাল ওকে ভালোভাবে রাখতে চেয়েছি। ও যদি এভাবেই ভালো থাকতে চায়, ক্ষতি কী! তাই এই ব্যবস্থা।’
ঘটনায় যুক্ত তিনজনই ভেমটিয়া এলাকায় বাসিন্দা। পেশায় টোটো মেকানিক ভেমটিয়ার তরুণ শিলিগুড়ি সংলগ্ন বাতাসি এলাকার এক তরুণীর প্রেমে পড়েন। দুই বছর ধরে চুটিয়ে প্রেম। বছর পাঁচেক আগে পালিয়ে বিয়ে। বছর তিনেক আগে সংসারে সন্তান আসে। তিনচাকার ব্যাটারিচালিত যানের ছোট-বড় সব সমস্যা যাঁর নখদর্পণে, ঘরনির মনের গ্যাঁড়াকল তিনি ধরতেই পারেননি। স্ত্রী বছরখানেক আগে এলাকার এক তরুণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। ওই তরুণ ছোটখাটো ব্যবসা করেন। প্রেম চুপিসারে ভালোই চলছিল। ঘন কুয়াশার আড়ালে দুজনের মেলামেশা সম্প্রতি ওই বধূর পরিবারের সদস্যদের কাছে ধরা পড়ে। তারপর দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে গোটা ঘটনার জানাজানি। সবাই ওই বধূর বিপক্ষে গেলেও স্বামী যাননি। সাত বছরের সংসারে তিনি ঘটনার আঁচ পড়তে দেবেন না বলে জানান। স্ত্রী অবশ্য বেঁকে বসেন। তিনি নতুন সম্পর্কে থাকতে চান বলে সবাইকে জানান। মেয়ের পরিবার অবশ্য তাঁর ইচ্ছেয় সায় জানায়নি। স্বামীর চোখে জল এলেও শেষপর্যন্ত স্ত্রীর ইচ্ছেতেই সায়। দুই পরিবার এবং এলাকার মাতব্বরদের উপস্থিতিতে স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি করে স্ত্রীকে স্বামী ওই ব্যবসায়ী তরুণের হাতে তুলে দিলেন।
শনিবার এলাকার একটি মন্দিরে বিয়ে করে নতুন সংসারযাত্রা শুরু হল তাঁদের। ওই বধূ বললেন, ‘এক বছর ধরে আমরা দুজন একে অপরকে ভালোবাসি। মন যখন আমার তখন সিদ্ধান্তও আমারই হওয়া উচিত।’ সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে না পারায় ওই বধূর অবশ্য মন খারাপ। ওই ব্যবসায়ী তরুণ বলেন, ‘ও আমাদের সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিয়ে চাওয়ায় আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই।’ দুজনে দুজনকে ভালো রাখবেন বলে নববিবাহিত দম্পতি জানিয়েছেন।