সৌরভ দেব, জলপাইগুড়ি : নামেই মেডিকেল কলেজ। পরিষেবার নামে লবডঙ্কা। না আছে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, না আছে ইকোকার্ডিওগ্রাফির ব্যবস্থা। হৃদরোগে আক্রান্ত হলে ছুটতে হয় প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে শিলিগুড়িতে। একই সমস্যা পেটের রোগের ক্ষেত্রেও। নেই এন্ডেোস্কোপির ব্যবস্থা। ফলে জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজ নিয়ে জনমানসে ক্ষোভ বাড়ছে ক্রমশ।
দিনকয়েক আগের ঘটনা। তৃণমূল নেতা সৈকত চট্টোপাধ্যায় জেল হেপাজতে থাকাকালীন শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মেডিকেল কলেজে। সেই সময় মেডিকেল বোর্ড তাঁকে হৃদযন্ত্রের সমস্যা খতিয়ে দেখতে ইকোকার্ডিওগ্রাফি করার জন্য ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গেল রবিবার।
শনিবার রাতে জলপাইগুড়ি শহরের বাসিন্দা রাজু বিশ্বাস তাঁর বৃদ্ধা মাকে ভর্তি করেছিলেন মেডিকেল কলেজে। তাঁর কথা অনুযায়ী, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন উনি। এক্ষেত্রেও চিকিত্সক রাজুর মাকে ইকোকার্ডিওগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজে সেই পরিষেবা না থাকায় যথেষ্টই সমস্যায় পড়ে যান তিনি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রবিবার দুপুরের পরে শহরের একটি নার্সিংহোমে শিলিগুড়ি থেকে আসা এক ডাক্তার ইকোকার্ডিওগ্রাফি করান। সেইমতো শেষ মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
রাজু বলছেন, ‘এখন প্রায় প্রতিদিনই প্রচুর মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। আর হৃদরোগের ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি চিকিত্সা সম্ভব ততই ভালো। কিন্তু জলপাইগুড়িতে মেডিকেল কলেজে এই পরিষেবা না মেলায় অন্যত্র ছুটতে হচ্ছে। আমার মায়ের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হল। সাধারণ গরিব রোগীদের স্বার্থে দ্রুত মেডিকেল কলেজে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফি করানোর মেশিনের বন্দোবস্ত করা দরকার।’
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজের এমএসভিপি ডাঃ কল্যাণ খান। তিনি বলছেন, ‘আমাদের এখানে কার্ডিওলজি বিভাগ নেই। যে কারণে চিকিৎসক এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও নেই। এটা অবশ্যই সমস্যার। আমরা সেক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি।’
ইকোকার্ডিওগ্রাফির মেশিন থাকলে রেডিওলজিস্টরাও অনেক ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা করতে পারেন। কিন্তু জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজ সেই রেডিওলজিস্টেরও একটা সমস্যা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। একজন মাত্র রেডিওলজিস্ট রয়েছেন এখানে। ফলে তাঁর একার ওপর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করারও মারাত্মক চাপ রয়েছে। মেডিকেল কলেজে বহির্বিভাগের রোগীদের আল্ট্রসনোগ্রাফির জন্য প্রায় দুই মাস অপেক্ষা করতে হয়। মাঝে স্বাস্থ্য ভবন থেকে আরও দুজন রেডিওলজিস্টকে জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজের জন্য পাঠানো হয়েছিল। সূত্রের খবর, তাঁরা কাজে যোগ দেওয়ার পর কাউকে কিছু না বলে চলে গিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ তাঁদের বেতন বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এদিকে, শহরের নার্সিংহোমে ইকোকার্ডিওগ্রাফি হলেও তা নিয়মিত নয়। শিলিগুড়ি থেকে ডাক্তাররা এসে সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমে এই পরিষেবা দেন। সেক্ষেত্রে ইকোকার্ডিওগ্রাফি করাতে ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। মেডিকেল কলেজ সূত্রে খবর, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং কার্ডিওলজির আলাদা বিভাগ না থাকার কারণে যে সিসিইউ পরিষেবা রয়েছে সেগুলোকে আইসিইউতে উন্নীত করা সম্ভব হচ্ছে না।
জলপাইগুড়ি শহরের বাসিন্দা তথা শিক্ষক তাপস সরকার বলছেন, ‘বর্তমান সময়ে উন্নত চিকিত্সা ব্যবস্থায় একটা মেডিকেল কলেজে ইকোকার্ডিওগ্রাফির ব্যবস্থা থাকা খুবই জরুরি। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের মন্ত্রীর কাছে আবেদন থাকবে, জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজে এই পরিষেবা দ্রুত যাতে জেলার মানুষ পেতে পারে।’
সাধারণের কথা ভেবে স্বাস্থ্য দপ্তরের টনক কবে নড়ে, এখন তারই অপেক্ষায় জলপাইগুড়িবাসী।