শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ির নিয়ন্ত্রিত বাজারে প্রশাসনিক মদতেই বেআইনি নির্মাণের রমরমা। বাজারের দুই নম্বর গেটে লেভি আদায় কেন্দ্রের পিছনের যে নির্মাণ, তা নিয়ে কয়েকদিন ধরে জলঘোলা হচ্ছে। সেখানে পাঁচতলা ভবনের অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটি।
কীভাবে একটি নিয়ন্ত্রিত বাজারে পাঁচতলা ভবন হচ্ছে, কোথা থেকে এই বহুতল তৈরির বিল্ডিং প্ল্যান পাশ হল সেসব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক কর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বাজার কমিটির সচিব অনুপম মাইতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই জমিতে অনেক আগেই নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে এখন বহুতল তৈরি হচ্ছে। কোনও অনিয়ম হয়ে থাকলে আমরা সেটা দেখব।’
তবে প্রশ্ন তুলেছেন পুরনিগমের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার দিলীপ বর্মন। দিলীপ বলেন, ‘ল্যান্ড ইউজ কম্প্যাটিবিলিটি সার্টিফিকেট (এলইউসিসি) ছাড়াই কীভাবে ওই নির্মাণ হচ্ছে তা আমাদের জানা নেই। বিষয়টি এর আগেও মন্ত্রীকে বলেছি। আমাদের ওয়ার্ডে এভাবে বেআইনি নির্মাণ হবে, আর আমরা চুপচাপ বসে থাকব, সেটা হতে পারে না।’
নিয়ন্ত্রিত বাজারের জমি অন্য কোনও ব্যক্তি বা সংস্থাকে হোটেল, বাজার বা অন্য কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য লিজ দেওয়া যেতে পারে কি? কৃষি বিপণন দপ্তরের আইন বলছে, নিয়ন্ত্রিত বাজারগুলিই রীতিমতো সরকারের কাছে জমি লিজ নিয়ে তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকারের বোর্ড অব রেভেনিউ দপ্তরকে রাজস্ব দিয়েই কৃষি বিপণন দপ্তর ওই জমির অধিকার পেয়েছে। ১৯৮০ সাল থেকে এই নিয়মেই নিয়ন্ত্রিত বাজার বা হাটগুলি চলে আসছে। সেই নিয়মের ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রিত বাজারে ব্যবসার জন্য কৃষি বিপণন দপ্তর স্টল বানিয়ে তা ব্যবসায়ীদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কোনওভাবেই নিয়ন্ত্রিত বাজারের জমি দীর্ঘমেয়াদি সাব-লিজ বা ভাড়ায় অন্য কারও কাছে বিক্রি করা যাবে না।
অথচ শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারে রীতিমতো ৩০ বছরের জন্য ১২ কাঠা জমি ভাড়ায় দেওয়া হয়েছে। কলকাতার দুই ব্যবসায়ীর কাছে ২০১১ সালে এই জমি ভাড়ায় দেওয়া হয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত বাজারকে প্রতি বছর প্রায় দেড় লক্ষ টাকা ওই জমির ভাড়া মেটাবেন দুই ব্যবসায়ী। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ওই চুক্তিতে এক জায়গায় ১২ কাঠা জমির উপরে ৬০০০ বর্গফুটের গুদামঘর তৈরির কথা বলা রয়েছে। আবার পরের পৃষ্ঠাতেই বলা হয়েছে, নীচে এই বাজারে আসা যানবাহন রাখার জন্য পার্কিং জোন তৈরি করে পাঁচতলা ভবন তৈরি হবে। সেখানে কৃষিপণ্যের স্টল তৈরি করা যাবে। এত কিছু জটিলতা, বেআইনি কাজের অভিযোগ ওঠার পরেও এই ভবন নিমার্ণের কাজ চলছে। আর তা নিয়েই নিয়ন্ত্রিত বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।