প্রসেনজিৎ সাহা, দিনহাটা: দিনহাটা (Dinhata) শহরের অলিগলিতে গত কয়েক বছরে গজিয়ে উঠেছে একাধিক বেসরকারি ল্যাব। এইসব ল্যাবের (Illegal Lab) কোনটি বৈধ আর কোনটি অবৈধ তা বোঝা সাধারণ মানুষের পক্ষে দায় হয়ে পড়েছে। একই পরীক্ষার রিপোর্ট একেকটি প্যাথ ল্যাব থেকে আসছে একেকরকম। কোন রিপোর্টের উপর ভরসা করবেন, আর কোনটায় করবেন না, বুঝে উঠতে পারছেন না রোগী ও তাঁর পরিজন।
বর্তমানে যে কোনও রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে পরীক্ষানিরীক্ষা করাতে হয়। সেক্ষেত্রে ল্যাবগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর সেই ল্যাবের রিপোর্টের ওপর ভরসা করেই চলে রোগীর পরবর্তী চিকিৎসা।
দিনহাটা শহরে প্রায় চল্লিশটিরও বেশি ল্যাব রয়েছে। তবে এদের অনেকেরই প্রয়োজনীয় লাইসেন্স এবং উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। পরিকাঠামো এবং লাইসেন্স ছাড়াই সবার চোখের সামনে এইসব ল্যাব অসহায় মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা করছে। পরিকাঠামো না থাকলেও ছোট ছোট দোকান ঘর ভাড়া নিয়েই কেউ কেউ প্যাথলজিকাল ল্যাব (Pathology Lab) খুলে ফেলেছেন। গ্রামগঞ্জ থেকে আসা রোগীদের সেই ল্যাবগুলি টার্গেট করে ব্যবসা করছে। আর সবই চলছে প্রকাশ্যে, বুক ফুলিয়ে। স্বাস্থ্য এবং সাধারণ প্রশাসন বিষয়টি জানে না এমন নয়, তবে নানা কারণে ঘাঁটায় না। সবাই সব জানলেও আশ্চর্যজনকভাবে সবাই চুপ।
আর এই সুযোগে অবৈধ ল্যাবের স্টাফ গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন শহরের চিকিৎসকের চেম্বারের বাইরে। এরপর চিকিৎসকের চেম্বার থেকে রোগী কাগজপত্র হাতে নিয়ে বাইরে বেরোতেই পাকড়াও করছেন তাঁদের। তাঁরাই বলে দিচ্ছেন কোন ল্যাবে গিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। রোগী ও তাঁর পরিজন ভালোমন্দ বোঝার আগেই সেই এজেন্ট রোগীকে ল্যাবে নিয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করিয়ে আনছেন। বাইরে থেকে দিনহাটা শহরে আসা রোগী ও তাঁর পরিজন কীভাবে বুঝবেন যে কোন ল্যাবের লাইসেন্স নেই?
স্থানীয় বাসিন্দা জগন্নাথ সরকারের কথায়, ‘এর আগে একবার কোলেস্টেরল পরীক্ষা করাতে গিয়ে দেখেছি একেক ল্যাবে একেক রিপোর্ট। অগত্যা কোচবিহারের (Coochbehar) এক বেসরকারি ল্যাব থেকে পরে আবার পরীক্ষা করাই। তবে এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে শহরের বুকে। এক্ষেত্রে অভিযোগ জানাতে অনেকেই সাহস পাচ্ছেন না।’
স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশিকা অনুযায়ী যে কোনও ল্যাব চালাতে গেলে লাইসেন্স জরুরি এবং সেই লাইসেন্স প্রতিবছর রিনিউয়াল করা প্রয়োজন। পাশাপাশি ল্যাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত টেকনিসিয়ান ও প্যাথলজিস্ট এবং ল্যাবের চিকিৎসা বর্জ্য ফেলার জন্য গ্রিনজোন বায়োটেক ব্যবস্থাপনা থাকা আবশ্যিক। কিন্তু দিনহাটা শহরের অধিকাংশ ল্যাবেই এইসব পরিকাঠামোর বালাই নেই। তা সত্ত্বেও তারা দিব্যি পসার জমিয়ে বসেছে শহরের বুকে।
চিকিৎসকদের কথায়, রিপোর্ট ভুল হলে চিকিৎসার পুরো প্রক্রিয়াই ব্যাহত হয়ে থাকে। কেননা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা রিপোর্ট দেখেই রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার পরবর্তী পদক্ষেপ শুরু করা হয়। প্রবীণ চিকিৎসক বিদ্যুৎকমল সাহা বলেন, ‘চিকিৎসা প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার সঠিক রিপোর্ট খুবই জরুরি। তাই যে কোনও ল্যাবের সঠিক রিপোর্ট না হলে সেক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে।’
এবিষয়ে কোচবিহার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সুকান্ত বিশ্বাস জানান, তাঁদের কাছে এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে কোনও ল্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসেনি। যদি আসে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।