রণজিৎ ঘোষ, নকশালবাড়ি: ট্র্যাক্টরে করে বালি পাচার চলছেই। শিলিগুড়ির (Siliguri) নকশালবাড়ি, খড়িবাড়িতে প্রতিদিন দেড়-দু’হাজার ট্র্যাক্টর সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিভিন্ন নদী থেকে বালি তুলছে (Illegal Mining)। তারপর হয় বিহারে পাচার করছে নাহলে কোনও ফাঁকা জায়গায় জমা করছে। সেখান থেকে রাতে ডাম্পারে করে বালি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে গন্তব্যে। আর এসবই চলছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
সামনেই ভোট। মুখ্যমন্ত্রী সহ একাধিক ভিভিআইপি এখন উত্তরবঙ্গে রয়েছেন। তারপরেও এভাবে দিনের আলোয় বালি পাচারের ঘটনায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে। দার্জিলিংয়ের জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (Darjeeling BLRO) রামকুমার তামাং অবশ্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকদের পাশাপাশি এসএসবিকেও এই বিষয়ে বলা হয়েছে। আমরা আরও নজরদারি বাড়াচ্ছি। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নকশালবাড়ি, খড়িবাড়িতে বিভিন্ন নদীর ঘাট থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালি তুলে পাচার চলছে। অভিযোগ, শাসকদলের একটা বড় অংশের প্রচ্ছন্ন মদতে এই কারবার গত দেড় বছরে আরও বেড়েছে। নকশালবাড়ি এবং খড়িবাড়িতে মেচি, চেঙ্গা, মাঞ্ঝা, ডুমুরিয়া নদীতে বিভিন্ন ঘাটের পাশাপাশি এই নদীগুলিতে কৃত্রিম ঘাটও তৈরি করা হয়েছে। মেচি নদীর তরিবাড়ি, নেহাল, শিবগড় থেকে প্রতিদিন অবাধে নদী খনন করে সমস্ত বালি তুলে নিয়ে ঘাটে জমা করা হচ্ছে। সেই বালি ট্র্যাক্টরে করে সরাসরি মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় এবং চেকরমারি হয়ে বিহারে পাচার হচ্ছে। নকশালবাড়ির জাবরা ডিভিশনের ভিতরে এবং বেলগাছিতে চেঙ্গা ও মাঞ্ঝা নদীতে সরাসরি কয়েকশো ট্র্যাক্টর সবসময় বালি তুলছে। একই অবস্থা খড়িবাড়ির ডুমুরিয়া নদীতেও। প্রায় সবক’টি ট্র্যাক্টরেরই পণ্য বহনের ডালার অনুমতি নেই। চালকরাও বেশিরভাগই নাবালক। সব দেখেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় পরিবহণ দপ্তর। দার্জিলিংয়ের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক সোনম লেপচাও একইভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, এই নদীগুলি থেকে তোলা বালির একটা বড় অংশ নকশালবাড়ি এবং খড়িবাড়ির বিভিন্ন ডাম্পিং গ্রাউন্ডে জমা হয়। এর মধ্যে বেঙ্গাইজোতে দুটি এবং সাতভাইয়ায় একটি ডাম্পিং গ্রাউন্ড রয়েছে। সেখান থেকে পরে বালি ডাম্পারে করে বিহারে পাচার হচ্ছে। অথচ সরকারের ঘরে কোনও রাজস্ব ঢুকছে না। অভিযোগ, পুলিশ, প্রশাসনের একাংশ এবং রাজনৈতিক নেতাদের সেটিং করেই এই কারবার চলছে। সেজন্য সবাই দেখেও না দেখার ভান করে রয়েছেন। পদক্ষেপও করছেন না।