গঙ্গারামপুরঃ অশালীন কার্যকলাপের আঁতুড়ঘর গঙ্গারামপুরের কালদিঘি পার্ক। সকাল ১১ টা বাজতেই খুলে যাচ্ছে পার্ক। আর পার্ক খুলতেই সেখানে ভিড় জমাচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক যুবক যুবতী বা পড়ুয়ারা। পার্কের নিরিবিলি স্থানে কিংবা ঝোপঝাড় খুঁজে নিচ্ছেন তারা। শুধু গল্পগুজব বা প্রেম নয়, অন্তরঙ্গ হয়ে পড়ছেন প্রেমিক যুগলেরা। সম্প্রতি কালদিঘি পার্কে বেশ কিছু যুগলদের আপত্তিকর কার্যকলাপের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছে। এই বিষয়টি নজরে আসতে তীব্র নিন্দার ঝড় বইছে শহরজুড়ে। আপত্তিকর এই সব কর্মকাণ্ড রুখতে পার্কে কড়া নজরদারি চালানোর দাবি জানান জানিয়েছেন পুর নাগরিক সহ বিশিষ্ট জনেরা। এত কিছুর পরেও সবটাই অজানা বলে দাবি করেছে পুর কর্তৃপক্ষ।
বাম আমলে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী কালদিঘির জলাশয়কে কেন্দ্র করে জেলা পরিষদের উদ্যোগে পার্ক তৈরি করা হয়। ২০১৫ সালে গঙ্গারামপুর পুরসভা তৃণমূল দখল করবার পর, এই পার্কটিকে পুরসভার হাতে হস্তান্তর করে দেয় জেলা পরিষদ। পরবর্তীতে এই পার্কে ট্রয় ট্রেন, শিশুদের জন্য বিশেষ উদ্যান সহ নানান একাধিক উন্নয়ন করে পুরসভা। তারপর থেকে এই পার্কের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ তৈরি হয় ও জন সমাগম বাড়তে থাকে। কিন্তু বর্তমানে এই পার্কে প্রকাশ্যে এমন সব অশ্লীল কার্যকলাপ চলছে, যা দেখে লজ্জায় মুখ ঢাকছে গোটা শহর।
কী এমন ঘটছে এই পার্কে? সম্প্রতি বেশ কিছুদিন ধরে সকাল ১১ টার পর, প্রাপ্তবয়স্ক অপ্রাপ্তবয়স্ক যুবক যুবতী ও ছাত্র-ছাত্রীরা দলবেঁধে পার্কে প্রবেশ করছেন। পার্কের অভ্যন্তরে বিভিন্ন গাছ, ঝোপঝাড়ের আড়ালে বসছেন এবং তাদের অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা মিলছে। জোড়ায় জোড়ায় পার্কের আনাচে কানাচে বসেই এই অসামাজিক, অশ্লীল কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে প্রেমিক যুগলেরা। নেই কোনও নজরদারী। আর এই সুযোগেই বাড়বাড়ন্ত তাদের। এই কারণেই বহু মানুষ কালদিঘি পার্কে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছেন। নিয়মিত নজরদারির অভাবে অশালীন কার্যকলাপের নিশ্চিন্ত পিঠস্থান হয়ে উঠেছে কালদিঘি পার্ক।
এবিষয়ে চিত্র পরিচালক কথা পুর নাগরিক স্বাধীন মল্লিক জানান, সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কালদিঘি পার্কে প্রেমিক যুগলেরা আপত্তিজনক অবস্থায় রয়েছে এবং তারা বহাল তবিয়তে এই সমস্ত কার্যকলাপ করে চলেছে। এটি অত্যন্ত নিন্দার, লজ্জার এবং উদ্বেগের বিষয়। পার্কে সাধারণত ঘুরতে বা আড্ডা দিতে সকলে যায়। সেখানে যদি এই ধরনের আপত্তিজনক, অশালীন কার্যকলাপ হয়, তাহলে তা আগামী দিনের জন্য, আগামী প্রজন্মের জন্য, বিপজ্জনক দিনের আহ্বান করছে। এটা এসব অসামাজিক কার্যকলাপ অচিরেই বন্ধ হওয়া উচিত।
এবিষয়ে চিত্রশিল্পী অভিজিত সরকার জানান, পার্কে গল্প গুজব, প্রেম হতেই পারে। প্রেমিক প্রেমিকেরা পার্কে যাবে গল্প গুজব করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা বলে প্রেমের নামে অশালীন কার্যকলাপ, প্রকাশ্যে অন্তরঙ্গ হওয়া এসব সত্যি নিম্ন রুচির পরিচয়। অবিলম্বে এই ধরনের ঘটনা বন্ধ হওয়া উচিত। এই ধরনের ঘটনা পার্কে যাতে না হয়, তার জন্য কড়া নজরদারির প্রয়োজন।
এবিষয়ে পুর নাগরিক তথা গৃহবধু তনুজা সরকার জানান, আগে ছুটির দিনে বাচ্চাদের নিয়ে পার্কে যেতাম। কিন্তু সেখানে প্রবেশের পথে যুবক যুবতীদের আপত্তিজনক অবস্থায় প্রায়শই দেখতে পেতাম। এরপর আর সেখানে যাবার রুচি হয় না। পরিবার নিয়ে পার্কে ঢুকবার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি সেখানে আর নেই। নোংরামি শীর্ষস্তরে পৌঁছে গিয়েছে। এখন বাধ্য হয়ে শিশুদের নিয়ে কালিতলা শিশু পার্কে আমাদের যেতে হয়। পার্কে এসব নোংরামি দ্রুত বন্ধ হওয়া উচিত। প্রশাসনকে এই বিষয়ের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
এ প্রসঙ্গে পুর নাগরিক দীপক অধিকারী জানান, পার্কে উপযুক্ত নজরদারির অভাবে দিনের পর দিন এই ধরনের অশালীন কার্যকলাপ বেড়েই চলেছে। অবিলম্বে এই ধরনের অশালীন কার্যকলাপ রুখা না গেলে, ভবিষ্যতে এই অশালীন কার্যকলাপ বড় কোনও অপরাধের দিকে এগিয়ে যাবে। এবিষয়ে প্রশাসনকে খুব গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
এ বিষয়ে গঙ্গারামপুর পুরসভার পুর প্রধান প্রশান্তি মিত্র জানান, এই বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রথম জানতে পারলাম। এই ধরনের ঘটনা যদি সত্যিই ঘটে থাকে, তা সত্যি উদ্বেগের বিষয়। এনিয়ে পুরসভার পক্ষ থেকে আগামী দিনে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এর পাশাপাশি এসব রুখতে বিশেষ অভিযান চালানোর জন্য পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেব।