রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: স্ত্রীর অনেক দিনের শখ ছিল সোনার হার পরবে। তাই কেউ স্ত্রীকে গলার হার বানিয়ে দিয়েছে। আবার কেউ বোনের বিয়ে দিয়েছে তো কেউ ব্যক্তিগত ঋণ মিটিয়েছে। কেউ আবার বাবাকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়েছে। শিলিগুড়িকে গাড়ির শোরুমে ডাকাতি কাণ্ডে ধৃত দুই জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই তথ্য পেয়েছে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দারা। শুধু তাই নয় দেশের অন্যান্য রাজ্যে গাড়ির শোরুমে ডাকাতি কাণ্ডেও নাম জড়িয়েছে অভিযুক্তদের। ধৃতদের পুরো দল পাদরি গ্যাং নামেই পরিচিত। শিলিগুড়িতে গাড়ির শোরুমে ডাকাতির পর এই প্রথম পাদরি গ্যাংয়ের সদস্যরা পুলিশের জালে ধরা পড়েছে। এর আগে একাধিক জায়গায় ধৃতরা ডাকাতি করেছে। কিন্তু তাদের চিহ্নিত করা গেলেও এতদিন পুলিশের নাগালে আসেনি বলে জানা গিয়েছে। ধৃতদের প্রয়োজনে মধ্যপ্রদেশ নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশের এডিসিপি সুভেন্দ্র কুমারের বক্তব্য, তদন্ত চলছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় গাড়ির শোরুমে ডাকাতি কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশ। ওই দুই জনের মধ্যে রাজা যোগী ডাকাতি কাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়ির চালক ছিল। অপরজন রোহিত চৌহান ডাকাতির মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছিল। গোটা ঘটনায় ১১ জনের একটি দল কাজ করেছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। লুঠের ২৪ লক্ষ টাকা সকলের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হয়েছে। একেক জন দুই লক্ষ টাকা থেকে একটু বেশি করে পেয়েছে। ওই টাকা একেক জন একেকরকম ভাবে ব্যবহার করেছে। গত ১১ জুলাই রাজা যোগীর বোনের বিয়ে ছিল। ১০ হাজার টাকা বাদ দিয়ে ভাগের বাকি টাকা বোনের বিয়েছে খরচ করেছে রাজা। ওই ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
অন্যদিকে, রোহিতের গ্রামে অনেক ঋণ হয়ে গিয়েছিল। তাই ডাকাতির ভাগের টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করেছে রোহিত। এদের বাদ দিয়ে বাকি নয় জনকেও চিহ্নিত করে ফেলেছে শিলিগুড়ি পুলিশ। তবে দুজনকে গ্রেপ্তার করতেই বাকিরা গা ঢাকা দিয়েছে। বাকিদের খোঁজ করতে গিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছে তাদের মধ্যে একজন ওই টাকা দিয়ে বাবার চিকিৎসা করিয়েছে অপরজন স্ত্রীর জন্য সোনার গয়না গড়িয়ে দিয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে বাকিদের কারও নামই প্রকাশ্যে আনতে চাইছেন না তদন্তকারী আধিকারিকরা।
দেশের আর কোথায় কোথায় অভিযুক্তরা শোরুমে ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত সেই তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ওই সমস্ত এলাকার পুলিশের সঙ্গে কথা বলে তথ্য নিচ্ছে শিলিগুড়ি পুলিশ। তবে বাকি যে টাকা রয়েছে তা উদ্ধার করা খুবই কঠিন কাজ বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীদের একাংশ। ডাকাতির পর প্রত্যেকেই টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে। এরপর সেই টাকা খরচও করে ফেলেছে। তাই এতদিন পর ওই টাকা উদ্ধার করা অসম্ভব ধরে নিয়ে এগোচ্ছেন তদন্তকারীরা। তবে অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। বাকিদের মোবাইল ফোনের নম্বর ট্র্যাক করছে শিলিগুড়ি পুলিশের গোয়েন্দারা। পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। মধ্যপ্রদেশ পুলিশের কাছে শিলিগুড়ি পুলিশ আবেদন করেছে অভিযুক্তদের এলাকায় দেখা গেলেই যেন গ্রেপ্তার করে খবর দেওয়া হয়।