শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: রেফারি বাঁশি বাজালেই বন্ধ হয়ে যায় গান। তারপরই চেয়ার দখলে ছুটোছুটি শুরু করেন প্রতিযোগীরা। জনপ্রিয় খেলা ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’ এই ছবিটা প্রায় সকলেরই জানা। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদটিও এখন মিউজিক্যাল চেয়ারের মতই হয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে চেয়ার দখলে ছোটাছুটি চাক্ষুস করা না গেলেও প্রতিযোগীদের ঠান্ডা লড়াইয়ের কথা এখন আর গোপন নেই। সোমবার ফের বদলাল উপাচার্য। এবার দায়িত্বে এলেন আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং কলা অনুষদের ডিন রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়। এনিয়ে গত দশ মাসে পাঁচবার উপাচার্য সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বদল হল। আর উপাচার্য বদলাল তিনবার। নবান্ন আর রাজভবনের সংঘাতে বার বার উপাচার্য বদলে কার্যত শিকেয় উঠেছে ক্যাম্পাসের পড়াশোনা থেকে গবেষণা। বিরক্ত শিক্ষক থেকে ছাত্র-ছাত্রী সকলেই।
এদিন দুপুরেই রাজভবন থেকে উপাচার্য বদলের নির্দেশ পৌঁছায় বিশ্ববিদ্যালয়ে। তড়িঘড়ি কাগজ-কলমে দায়িত্ব বুঝে নেন রথীন। দুপুরেই রাজভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ‘জয়েনিং লেটার’। রথীনের কথায়, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ দায়িত্ব সামলাতে হবে এটা ভাবতে পারিনি। হঠাৎ করেই রাজভবন থেকে নির্দেশ আসে। প্রথম দিন সকলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সুষ্ঠভাবে ক্যাম্পাস চালানো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মানোন্নয়নই মূল লক্ষ্য হবে। জয়নিং লেটার রাজভবনের পাশাপাশি শিক্ষা দপ্তরেও পাঠিয়ে দিয়েছি।’ শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও ছাত্র-ছাত্রিদের একাংশ এদিন নতুন উপাচার্যের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তাঁকে অভিনন্দন জানান।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই-এর ডাকে ২০২২ এর ২৫ অগাস্ট ক্যাম্পাস ছেড়েছিলেন তৎকালীন উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্য। তারপর থেকেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। সুবীরেশ ক্যাম্পাস ছাড়ায় টানা ৩৪ দিন উপাচার্যহীন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর তিন দফায় তিন মাস, চার সপ্তাহ এবং দু মাসের জন্য উপাচার্য হন ওমপ্রকাশ মিশ্র। সাকুল্যে ছয় মাস উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকলেও টানা সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি ওমপ্রকাশকে। প্রথম দফার মেয়াদ ফুরোনোর পাঁচদিন পর তাঁকে পুনরায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর দ্বিতীয় দফার দায়িত্ব শেষ হওয়ার ৫৪ দিন পর ফের শর্তসাপেক্ষে চেয়ারে বসেন তিনি। মাঝে ৫৮ দিন উপাচার্যের দায়িত্বে কেউ ছিলেন না।
ওমপ্রকাশকে সরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ও দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সঞ্চারী রায় মুখোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। কেন হঠাৎ করেই মাত্র ৫৬ দিনের মাথায় সঞ্চারীকে সরিয়ে দেওয়া হল তা বুঝে উঠতে পারছেন না কেউই। রাজ্য শিক্ষা দপ্তর ও শাসক দলের চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসে রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্যের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বৈঠক করিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন সঞ্চারী। কিন্তু কোন সমীকরণে তাঁকে সরিয়ে রথীনকে চেয়ারে বসানো হল তা মেলাতে পারছেন না কেউই।