সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি: আয়োজনে দুটোই দেশের অন্যতম বড় ইভেন্ট। ফি বছর আয়োজিত আইপিএল ট্রফির গায়ে সংস্কৃতে লেখা ‘যেখানে প্রতিভা খুঁজে পায় সুযোগ’, আবার বিজ্ঞাপনী প্রচারে একে বলা হয় ‘মনোরঞ্জন কা বাপ’। অন্যদিকে, লোকসভা ভোটকে বলা হচ্ছে ‘গণতন্ত্রের উৎসব।’ দুইয়ের দাপটে আগামী মাসদুয়েক মেতে থাকবে আসমুদ্রহিমাচল। তবে আইপিএলের নির্ঘণ্ট ভয় ধরাচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের বুকে। ভরসন্ধ্যায় ম্যাচের টানটান উত্তেজনা ছেড়ে প্রচারে তরুণদের কতটা পাওয়া যাবে, সে নিয়ে তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।
ধূপগুড়ি শহরতলির গাদংয়ের বাসিন্দা বছর তিরিশের সন্তোষ বিশ্বাসের কথায়, ‘পঞ্চায়েত ভোটের আগের মাসখানেক রোজই পিকনিক থাকে। প্রচারের একটা আমেজ পাওয়া যায়। লোকসভায় ব্যাপারটা ম্যাড়মেড়ে। তাছাড়া সবাই মিলে আইপিএল দেখব, সঙ্গে আড্ডা এবং খাওয়াদাওয়া চলবে।’
সাধারণত লোকসভা নির্বাচনে বুথ স্তরে মাটির লড়াই ততটা জোরালো হয় না। বিশাল এলাকা এবং বিরাট অঙ্কের ভোটার সংখ্যায় হারজিত নিয়ে একেবারে নীচতলায় আকচা-আকচি সেভাবে দেখা যায় না। পুরসভা বা পঞ্চায়েত ভোটে ব্যাপারটা অনেক আলাদা। এলাকার রাজনৈতিক মাটি দখলের লড়াইয়ে প্রার্থী এবং নেতাদের উদ্যোগে খানাপিনা থেকে জমজমাট প্রচারের আয়োজন থাকে সব জায়গায়। লোকসভায় স্থানীয় নেতার গাঁটের কড়ি খরচ করে সেই আয়োজন হওয়ার আশা নেই৷
তাই আশঙ্কা, আইপিএলের টানে পাড়ার নেতাগোছের দাদা-কাকুদের ডাক উপেক্ষা করবে তরুণরা। তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদক রাজেশকুমার সিং বললেন, ‘রাজনীতির চাইতে টি টোয়েন্টি ম্যাচ স্বাভাবিকভাবে নতুন প্রজন্মকে বেশি টানবে। সেই কথা মাথায় রেখে প্রচারের পরিকল্পনা করতে হবে। তবে দলের একনিষ্ঠ কর্মীরা অবশ্যই এলাকায় সক্রিয়।’
তাই ভোট ম্যানেজারদের পরিকল্পনা, মহিলাদের প্রচারকর্মী হিসেবে আরও বেশি করে কাজে লাগানো। এমনিতেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের উপভোক্তাদের নির্বাচনি লড়াইয়ের ময়দানে বাজি হিসেবে ধরছে জোড়াফুল শিবির। প্রচারে আইপিএলের ধাক্কা সামলাতে আপাতত তাঁদের গুরুত্ব দিচ্ছেন তৃণমূল নেতারা।
ভোটের মুখে আইপিএল নিয়ে বিজেপির ধূপগুড়ি বিধানসভা কমিটির আহ্বায়ক চন্দন দত্তের প্রতিক্রিয়া, ‘ম্যাচ চলাকালীন তরুণদের পাওয়া যেমন কঠিন, তেমন খেলায় মজে থাকা পরিবারে প্রচারে গেলে তাঁরাও বিরক্ত হয়। আমাদের কর্মীরা সারাবছর মানুষের পাশে থাকেন। ফলে ভোটারদের গায়ে পড়ে বিরক্ত না করেই নিবিড় প্রচার চলবে।’
আইপিলের মতো মেগা ইভেন্টের প্রভাবে প্রচার যে ব্যাহত হবে তা মেনে নিয়ে বাম নেত্রী তথা প্রাক্তন বিধায়ক মমতা রায় বললেন, ‘তরুণসমাজের কাছে রাজনীতি নিরস, তুলনায় আইপিএল বর্ণময়। তবে আমাদের দল যেমন ভোট পার্টি নয়, পাশাপাশি আমাদের পেড প্রচারক প্রয়োজন হয় না। তবে আইপিএলের সময় বুঝেই প্রচার পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে।’
জলপাইগুড়ি আসনে ভোটের আগে প্রচারের জন্যে মেরেকেটে হাতে রয়েছে পঁচিশদিন। এরমধ্যে ভোটার স্ক্রুটিনি, নমুনা ইভিএম পরিচিতি, ভোটার স্লিপ পৌঁছানো মিলে কয়েকদফা বাড়ি বাড়ি পৌঁছাতে হবে। দিনে কাজের ব্যস্ত সময়ের বদলে সন্ধ্যার পর এই কাজের উপযুক্ত সময়। তাছাড়া বড় এলাকার ক্ষেত্রে মাঝবয়সি বা প্রৌঢ়দের বদলে কমবয়সিদের বেশি দরকার। সেই তরুণরা আইপিএলে মজে গেলে প্রচার নিশ্চিতভাবে মার খাবে। সেই ঘাটতি কোন পক্ষ কীভাবে সামাল দেবে, ভোটের আগে সেটাই বড় ভাবনা শিবিরগুলোতে।