শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: রাত তখন অনেকটাই গভীর। শহরের ব্যস্ত রাস্তা শুনসান। পানিট্যাঙ্কি মোড়ের ঘড়ির কাঁটাদুটোর টিকটিক শব্দটাও রীতিমতো কানে লাগছে। মাঝে মাঝে নিস্তব্ধতা চিরে ভ্রুম ভ্রুম শব্দে ছুটে যাচ্ছে বাইক-গাড়ি। রেস চলছে।
পানিট্যাঙ্কি মোড় ধরে চেকপোস্ট ধরে এগোনোর সময়ই নজরে পড়ল একটি পরিবার ব্যাগ নিয়ে রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছে। আশপাশ দিয়ে তো অনেকক্ষণ পরপর একটা-দুটো টোটো যাচ্ছে। তাহলে হাঁটছেন কেন? প্রশ্ন করতেই ওই পরিবারের এক মহিলা বলে উঠলেন, ‘কেউই তো নিতে চাইছে না’। নেবেই বা কেন? ভাড়ার আর কত টাকাই বা মিলবে, বরং অনেক বেশি লাভ ‘টোটোবার’ চালালে। খোলামেলা চলন্ত টোটোয় বসে মদ্যপান রাতের শিলিগুড়ি শহরে এখন নতুন ‘ইন থিং’।
কয়েকজন দাঁড়িয়ে রয়েছেন সেবক রোডের ধারে একটি কমপ্লেক্সের সামনে। মদ্যপ অবস্থায় তাঁরা ব্যস্ত নিজেদের মধ্যে ঝামেলায়। সেখানে সারি সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে বাইক, বিহার সহ বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন নম্বরের গাড়ি। রাস্তায় ভেসে আসছে গানের আওয়াজ। সেই কমপ্লেক্সজুড়ে রয়েছে একাধিক পাব। এত রাতে তো পাব খোলা থাকারই কথা নয়। পুলিশের নজরদারি টের পাওয়াই গেল না।
ওই কমপ্লেক্সের পাশ দিয়েই দ্রুতগতিতে গাড়ির যাতায়াত। দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে, কারও পরোয়া নেই। নজরে পড়ল, ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা এক তরুণী টোটোয় উঠলেন। আগে থেকেই ঠিক করে রাখা সেই টোটো চলল বিধান রোডের দিকে। এত রাতে ওই তরুণী কে? স্পষ্ট হল না।
পানিট্যাঙ্কি মোড় থেকে শালুগাড়া পর্যন্ত সেবক রোডে একাধিক মার্কেট কমপ্লেক্স, পাব ও বার রয়েছে। রয়েছে পিসি মিত্তাল বাস টার্মিনাস। অথচ নজরদারির ছিটেফোঁটা নেই। পিসি মিত্তাল বাস টার্মিনাসের একপাশে সারিবদ্ধ গাড়ির লাইন। গাড়ি মালিকদের গন্তব্য সংলগ্ন বারগুলো। কোথা থেকে তাঁরা আসছেন? ওই টাকাগুলোর উৎসই বা কী? কে জানে!
রাত পর্যন্ত নিজের ধাবা খোলা রাখেন রাম মাহাতো। বলছিলেন, ‘নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদেরই হাতে।’ রামের কথা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ ‘পাব-কমপ্লেক্স’ হিসেবেই পরিচিত ওই কমপ্লেক্সের সামনেই দুই গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করলেও তাদের থামানোর মতো কেউ ছিল না। প্রশ্ন আরও থাকছে। সেবক রোডজুড়ে থাকা পাব, বারগুলোতে বিহার থেকে আসা মানুষ ফুর্তির জন্য ভিড় করেন। পুলিশই জানিয়েছে, বিহার থেকে আসা ওই দুষ্কৃতীরাই শহরে ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসা করছে। তা সত্ত্বেও তো পাব, বারগুলোর সামনে বিশেষ কোনও নজরদারি নজরে পড়ল না।
আর পিসি মিত্তাল বাস টার্মিনাস? রাতে শুনসান ওই টার্মিনাসেই বসে যদি কেউ নাশকতার ছক কষে, তাহলেও দেখার কেউ নেই।
সেবক রোডে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর আশ্বাস দিয়েছিলেন, রাতেও ট্রাফিক নজরদারি করা হবে। কোথায় কী? উলটে সেবক রোডের বিভিন্ন জায়গায় স্পিডব্রেকের জন্য গার্ডরেল বসানো হলেও, সেসব সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রাস্তার ধারের কুলফির দোকানে প্রায়ই কুলফি খেয়ে কিছুটা রাত পর্যন্ত গল্পগুজব করে যান পাঞ্জাবিপাড়ার হর্ষ আগরওয়াল, বিকাশ মিত্তালরা। তাঁরা জানালেন, নিজেদের মধ্যে আড্ডা দিই, চলে যাই। বলা তো যায় না, কে রাস্তায় কী উদ্দেশ্যে ঘুরছে।