শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: চার মাস আগেই শিলিগুড়ি (Siliguri) করিডর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ‘রুট রেইকি’ শুরু করেছিল আইএস (IS)। সেই কাজে উত্তরবঙ্গ ও নিম্ন অসমে চল্লিশজনেরও বেশি চরকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আইএস-এর দুই শীর্ষ জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের তদন্তে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পেরেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সেই চরদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি জঙ্গিগোষ্ঠী আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)-এর সদস্য। চিকেন নেকে নাশকতার পরিকল্পনায় এবিটি ও আল-কায়দার ভারতীয় গোষ্ঠী আইএসকে সহযোগিতা করছে বলেই জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
সূত্রের খবর, ৭ ও ৮ মার্চ মিজোরামে ৫০ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার করে আসাম রাইফেলস। তার আগে ৫ মার্চ মণিপুরের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ ইনসাস রাইফেল, মর্টার, গ্রেনেড সহ প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার করে। আইএস-এর নির্দেশে সেগুলি সবই চিকেন নেক এলাকায় পাঠানো হচ্ছিল। সেই অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিল এবিটি।
সূত্রের খবর, দুই শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তারের পর সেই চরেরা বাংলাদেশ ও নেপালে পালানোর ছক কষছে। কোচবিহার, মালদা এবং নেপাল ও ভুটান সীমান্ত লাগোয়া ভারতীয় এলাকায় তারা গা-ঢাকা দিতে পারে। তাই বুধবার রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি শুরু হয়েছে। অসম পুলিশের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক প্রণবজ্যোতি গোস্বামীর কথায়, ‘সব জেলাকে সতর্ক করা হয়েছে। আন্তঃরাজ্য সীমানা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত জেলাগুলিতে বাড়তি সতর্কতামূলক কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’
এক সেনা গোয়েন্দাকর্তার বক্তব্য, ‘বেশ কিছু ভয়ংকর তথ্য মিলেছে। বাংলাদেশেও বার্তা পাঠানো হয়েছে।’ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কোনও কর্তা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। সূত্রের খবর, ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে দিল্লি থেকে এনআইএ’র দুটি বিশেষ দল অসমে পৌঁছেছে।
বুধবার অসমের ধুবড়ি থেকে ভারতে আইএস-এর শীর্ষ নেতা হরিস আজমল ফারুকি এবং তার সঙ্গী অনুরাগ সিং ওরফে রেহানকে গ্রেপ্তার করেছে অসম পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স এবং এনআইএ’র যৌথ দল। চিকেন নেকে নাশকতার উদ্দেশ্যেই দুই জঙ্গি কোচবিহারের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকেছিল। সেই ঘটনার পর হাই অ্যালার্ট জারি হয়েছে সর্বত্র। সূত্রের খবর, দুই জঙ্গির সঙ্গে পরিকল্পনা ছকতে আইএস, আল-কায়দা, এবিটি সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের আরও তিনটি জঙ্গি সংগঠনের সাত-আট সদস্যের ধুবড়িতে একত্রিত হওয়ার কথা ছিল। তারা যাতে কোথাও পালিয়ে যেতে না পারে তারজন্য অসম-বাংলা সীমান্তে জোর তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। অসম এবং পশ্চিমবঙ্গ- দুই রাজ্যের পুলিশই অসম-বাংলায় ঢোকা এবং বের হওয়ার প্রতিটি রাস্তায় নাকা চেকিং বসিয়েছে। প্রত্যেকটি গাড়ি, ট্রাকে তল্লাশি করা হচ্ছে। অসম-মেঘালয় সীমান্তেও শুরু হয়েছে তল্লাশি।
সূত্রের খবর, বিএসএফের গুয়াহাটি, উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গ- তিন ফ্রন্টিয়ারকেই সীমান্তে বাড়তি জওয়ান মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে জলপথে নজরদারি দ্বিগুণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একটি দল মালদা এবং মুর্শিদাবাদে তল্লাশি শুরু করেছে। কালিয়াচক, বামনগোলা ছাড়াও মুর্শিবাদাদের নরসিংহপুর এলাকায় গোয়েন্দারা গিয়েছিলেন। আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁ, কোচবিহার-১ ব্লকের দুটি এলাকা এবং শীতলকুচিতেও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা নজরদারি চালাচ্ছেন।