শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: বই পড়ার প্রবণতা বাড়াতে কমল গুহ একবার সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে রবীন্দ্রনাথের সঞ্চয়িতা বিলি করেছিলেন। দিনহাটা (Dinhata) শহরের শহিদ কর্নার থেকে সঞ্চয়িতা বিলি করা হয়েছিল। সেই শহিদ কর্নার থেকে দুশো মিটারের মধ্যেই মঙ্গলবার হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন দুই মন্ত্রী। এই দুই ঘটনা থেকেই সময়ের ব্যবধানে দিনহাটার রাজনীতির চরিত্র বদলের ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যায়। সমস্ত নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে দুই মন্ত্রীর হাতাহাতির ঘটনা দিনহাটার গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন রাজ্য রাজনীতিতে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে শুধু হাতাহাতি নয়, সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে মন্ত্রীর ডাকা বনধও রাজ্যে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে। তাই দিনহাটা কাণ্ডে ভোটের (Lok Sabha Election 2024) আগে লাভ-লোকসানের অঙ্ক কষতে শুরু করেছে গেরুয়া (BJP) ও জোড়াফুল (TMC), দুই শিবিরই।
তৃণমূলের এক সপ্তাহ আগেই ভোট প্রচারের ময়দানে নেমে পড়েছিলেন নিশীথ (Nisith Pramanik)। তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে ১০ মার্চ। তার সাতদিন আগেই ২ মার্চ নিশীথকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় বিজেপি। তবে হেভিওয়েট নিশীথের প্রচারে যেভাবে জমায়েত হওয়া উচিত, সেটা হচ্ছিল না। দলের অন্দরেই তা নিয়ে কানাঘুঁষো শুরু হয়েছিল। অন্যদিকে, জেলা বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতারাও ঘরে বসে রয়েছেন। রাজু রায়, দীপ্তিমান সেনগুপ্ত, সঞ্জয় চক্রবর্তী, অজয় সাহার মতো গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ের অন্যতম ভোট সেনাপতিরাও মাঠে নামেননি। অনবরত গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন তাঁদের ‘বিশ্বস্ত সঙ্গী’ নগেন রায়ও। জেলায় বিজেপির ছন্নছাড়া ছবিটা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছিল।
প্রার্থী ঘোষণার পরও যখন গেরুয়া শিবিরের গোষ্ঠীকোন্দল মেটার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, তখন নিজেদের বিবাদ মিটিয়ে অনেকটাই ঐক্যবদ্ধ জেলা তৃণমূল। ভেতরে যাই হোক না কেন, প্রকাশ্যে তৃণমূলের কোন্দল ইদানীং দেখা যায়নি। প্রচারের প্রথম রাউন্ডে বিজেপিকে টেক্কা দিয়ে সুবিধাজনক জায়গাতেই ছিল নীল-সাদা বাহিনী। তাল কাটল মঙ্গলবারের ঘটনায়। তৃণমূলের একাংশের ব্যাখ্যা, প্রকাশ্যে হাতাহাতিতে জড়িয়ে নিশীথকে লাইমলাইটে এনে দিলেন উদয়নই (Udayan Guha)।
রাজ্য তৃণমূলের এক নেতার কথা, ‘শুরুতেই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন নিশীথ। সুযোগ খুঁজছিলেন। গণ্ডগোলের ফলে রাজ্যপালকে এনে, মামলা করে আবার প্রচারে চলে এলেন। সেটা তৃণমূলের পক্ষে খুব একটা ভালো হল বলে মনে হয় না।’
সংখ্যালঘু ভোট বরাবরই ফ্যাক্টর। সেক্ষেত্রে মন্ত্রী হয়েও রমজান মাসে বনধ ডাকায় দলের অন্দরেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে উদয়নকে। সামনে হোলি, চৈত্র সেলের বাজারও জমতে শুরু করেছে। ব্যবসার ভরা মরশুমে গোটা দিন বনধে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরাও। তাহলে কি নিশীথের পাতা ফাঁদে পা দিয়েই সাজানো ফুলের বাগানে দমকা হাওয়ার মতো ঝটকা দিলেন উদয়ন? এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে তৃণমূলের অন্দরে। উদয়ন অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘একজন সাধারণ মানুষও যদি বলেন মঙ্গলবারের ঘটনায় আমার ভুল ছিল, তাহলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব।’
সাধারণ ঘটনা নিয়েই তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন দলের মুখপাত্ররা। সেখানে একজন মন্ত্রী আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ ওঠার পরও কেন টুঁ শব্দটিও করল না রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। নিশীথের হয়েও কেন গলা ফাটালেন না বিজেপি নেতারা, সেটা নিয়েও জোর চর্চা চলছে। সবমিলিয়ে হাতাহাতি করে আপাতত খানিকটা ব্যাকফুটেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী।