শুভজিৎ চৌধুরী, ইসলামপুর: লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha Election 2024) নাকি পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক উৎসব। এমনও শোনা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, ব্রিটেন, ব্রাজিল আর ফ্রান্সের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি মানুষ এ দেশের ভোটার তালিকায় রয়েছেন। তা এত মানুষ যে উৎসবে জড়িত তা নিয়ে একটু বাণিজ্য তো হবেই। এই বাণিজ্যের একটা ক্ষুদ্র সংস্করণ প্রতি নির্বাচনে দেখা যায় ইসলামপুরে (Islampur)। ভোট যেন এখানকার বাসিন্দাদের অনেকের কাছে উপার্জনের অন্য পন্থা।
সারাবছর তাঁরা নিজেদের রোজকার কাজ নিয়ে থাকেন। তবে ভোটের এক থেকে দুই দিন আগে পালটে যায় তাঁদের পেশা। ভোটের উৎসবে উপরি উপার্জন করতে ইসলামপুর কলেজের ডিসিআরসি সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী হোটেল খোলেন ওই এলাকার ভিন্ন পেশার মানুষ। প্রতিবার ভোটের সময় ইসলামপুর কলেজ মাঠ এলাকার বাসিন্দারা তাঁদের বাড়ির সামনে কয়েকদিনের জন্য এমন অস্থায়ী হোটেল খুলে থাকেন। এবারও খোলা হয়েছে।
কয়েকজন ব্যবসায়ী সারাবছর হোটেলের ব্যবসা করলেও এই ব্যবসার সঙ্গে রোজকার ব্যবসার কোনও মিল নেই। কেউ পেশায় সেলুন চালান, আবার কেউ যানবাহনের যন্ত্রাংশ বিক্রি করেন। তবে ভোটের জন্য যখন হাজারে হাজারে ভোটকর্মী ডিসিআরসিতে আসেন, সেই সুযোগে উপরি উপার্জনের জন্য এই রাস্তা বেছে নেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। নিজেদের বাড়ির সামনেই খুলে ফেলেন অস্থায়ী হোটেল। হোটেলে যেসব জিনিস রান্না হয় সবটাই করা হয় বাড়ির ভেতরে। শুধু বাড়ির বাইরে চেয়ার-টেবিল পেতে কাপড় দিয়ে নিজেদের জায়গা ঘিরে খুলে ফেলেন অস্থায়ী হোটেল।
সেই হোটেলগুলিতে দূরদূরান্ত থেকে আসা ভোটকর্মীরা খাবার খান। সুযোগ বুঝে খাবারের দামও একটু বাড়তি রাখা হয়। যেমন ডিম ভাতের দাম ৭০ টাকা। যে ডিম ভাত বাজারে অন্য দোকানে অনায়াসে ৫০ টাকায় পাওয়া যায়। ডিম ছাড়াও মাছ, মাংস সব ধরনের খাবারই পাওয়া যায়। সেসবের দামও অনেকটাই বেশি।
তবে বাধ্য হয়ে পেটের খিদে মেটাতে বাড়তি দাম দিয়েই ওইসব হোটেলে খাবার খান ভোটকর্মীরা। সঞ্জীব দে নামে এক ভোটকর্মী বলেন, ‘অনেক সকালে বাড়ি থেকে এসেছি। ভোরবেলায় তেমন কিছু খাওয়া হয়নি। তাই খুব খিদে পেয়ে গিয়েছিল। তাই এই হোটেলে খেয়ে নিলাম। কাছাকাছি হোটেল থাকায় ভালোই হয়েছে তবে দাম বেশি।’ উত্তম গোপ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘তিস্তা মোড় এলাকায় আমার মোটর পার্টসের দোকান আছে। তবে ভোটের দুই-একদিন বাড়ির সামনে হোটেল খুলে একদিনে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হয়ে যায়। তাই প্রতিবার ভোটের সময় দোকান বন্ধ করে এই আয়োজন করি।’ কার্তিক শীল নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবারই আমি এখানে প্রথম হোটেল খুলেছি। বাড়ির পাশে সেলুনের ব্যবসা করি। প্রতিবারই দেখি আমার প্রতিবেশীরা হোটেল খুলে ভালোই মুনাফা অর্জন করেন। তাই এবার আমিও হোটেল খুলেছি।’