প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুয়ায়ী দেবী জগদ্ধাত্রীর সেবক হিসেবেই মানা হয় ব্যসদেব ও নারদমুনিকে। তাই দেবী জগদ্ধাত্রীর সঙ্গে একই সঙ্গে ব্যসদেব ও নারদমুনির পুজো হয় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে। এক আধ বছর ধরে চটোপাধ্যায় বাড়িতে এইভাবে জগদ্ধাত্রী পুজো হচ্ছে এমনটা নয়। পারিবারিক রীতি ও ষোড়শ উপাচার মেনে দেড়শো বছরেরও বেশি সময়কাল ধরে এ বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে আসছে। পারিবারিক পুজো হলেও শক্তির এই দেবীর আরাধনা মাতোয়ারা হয় গোটা গ্রাম।
জামালপুরের কালীতলা পাড়ায় বসবাস বনেদি চট্টোপাধ্যায় পরিবারের। এই পরবিবারের কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল, আবার কেউ সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মচারী। কর্মসূত্রে বছরের বেশীরভাগ সময়টা পরিবার সদস্যরদের কলতাকায় থাকতে হয়। তবে জগদ্ধাত্রী পুজোয় সময় পরিবারের সকল সদস্য নিজেদের পৈতৃক বাড়িতে চলে আসেন। সাবেকি বাড়ির এক পাশে রয়েছে দেবী জগদ্ধাত্রীর মন্দির। মন্দিরের চারপাশ জুড়ে যেখানেই চোখ যাবে সেখানেই দেখা যায় শিল্প নৈপুণ্যতার ছোঁয়া। পুজোতেও শ্রদ্ধা ও ভক্তিভাবের কোনও খামতি থাকে না।
পরিবারের কর্তা দিলীপ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ছেলে সৌমাল্য চট্টোপাধ্যায় পরবারের সবাইকে নিয়ে বংশের আরাধ্য দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো অর্চনা সারেন। পরিবারের কন্যা রুনা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘দেড়শো বছরেরও বেশি সময়কাল ধরে তাঁদের বাড়ির মন্দিরে দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো হয়ে আসছে। বাড়ির দেবী প্রতিমাতেও রয়েছে বিশেষত্ব। এক চালার কাঠামোর ত্রিনয়নী দেবী প্রতিমার এক পাশে থাকেন মহাভারতের রচয়িতা ব্যসদেব, অপর পাশে থাকেন নারদমুনি।‘
সৌমাল্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের পরিবারে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরুর ইতিহাস সেভাবে কেউ লিখে যাননি। তবে পূর্বপুরুষরা যেমন রীতি ও উপাচার মেনে পুজোর সূচনা করেছিলেন সেই রীতি মেনেই আজও আমরা পুজো করে যাচ্ছি। আগে নবমীর দিন ছাগবলি হলেও এখন তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে ছাঁচি কুমড়া বলি দেওয়া হয়। নবমীর দিন মন্দির প্রাঙ্গনে অন্ন ভোগ গ্রহণ করেন ভক্তরা। দশমীর পুজো শেষে দামোদর নদে জগদ্ধাত্রী প্রতিমার বিসর্জন হয়।‘