নীহাররঞ্জন ঘোষ, মাদারিহাট: এই গরমে জলসংকট (Water Crisis) দেখা দিয়েছে সর্বত্র। মানুষ সাধারণত ভূগর্ভস্থ জল দিয়ে প্রয়োজন মেটায়। তবে বন্যদের ভরসা নদী, জলাশয়। শুখা মরশুমে বিভিন্ন বনাঞ্চলে জলাশয় শুকিয়ে গেলেও জলদাপাড়া (Jaldapara) এদিক দিয়ে ব্যতিক্রমী। এই জাতীয় উদ্যানের (Jaldapara National Park) কৃত্রিম জলাশয় বন্যপ্রাণীদের রক্ষাকবচ। সেগুলিতে সারাবছরই জল থাকে। এছাড়াও রয়েছে কয়েকটি নদী। শুধু হলং নদী ছাড়া বুড়িতোর্ষা, শিসামারা, চিরাখাওয়া ও তোর্ষা নদীতে সারাবছরই জল থাকে। ফলে তীব্র গরমেও জলদাপাড়ায় বন্যপ্রাণীদের জলের অভাব হয় না। এমনটাই জানিয়েছেন বনকর্তারা।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ছয়টি রেঞ্জ। জলদাপাড়া নর্থ, জলদাপাড়া পূর্ব, জলদাপাড়া পশ্চিম রেঞ্জ, চিলাপাতা, নীলপাড়া ও কোদালবস্তি। এই ছয়টি রেঞ্জেই রয়েছে গন্ডার, বাইসন, হরিণ, হাতি, চিতাবাঘ সহ অন্যান্য প্রাণী। তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে জলে থাকতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে গন্ডার। আর গন্ডারের জন্য মূলত দুই ধরনের জল প্রয়োজন। কাদাযুক্ত ও কাদা ছাড়া। জলদাপাড়ায় দুটোই রয়েছে বলে জানালেন জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের প্রাক্তন সহকারী বন্যপ্রাণ সংরক্ষক বিমল দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘কাদা শরীরকে যেমন ঠান্ডা রাখে তেমনি পোকামাকড়ের হাত থেকেও রক্ষা করে। আর জলদাপাড়ায় কৃত্রিম জলাশয়গুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কাদা রয়েছে। তবে এই জলাশয়গুলির নিয়মিত পরিচর্যার প্রয়োজন। এছাড়া কয়েকটি নদীতে সারাবছরই জল থাকে। প্রাণীকুলের জলের অভাব হয় না।’
একইভাবে জলদাপাড়া নর্থ রেঞ্জ অফিসার রামিজ রজারের বক্তব্য, জলদাপাড়ার জলাশয় ও নদীগুলির মাটির নীচ থেকে সারাবছরই জল বের হতে থাকে। আর বেশ কিছু কৃত্রিম জলাশয়ও রয়েছে। যার জন্য বন্যপ্রাণীদের জলের সমস্যায় কখনও পড়তে হয় না। আর গন্ডারের প্রিয় কাদাযুক্ত জলাশয় প্রচুর রয়েছে। জলাশয়গুলির পরিচর্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। তাই তীব্র গরমেও বন্যপ্রাণীদের জলের সংকট হচ্ছে না।
তবে হাতিদের আয়তন বড় হওয়ায় তাদের স্নানের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে বলে জানালেন কুনকিদের এক মাহুত। তাঁর কথায়, ‘নদীগুলির জল কমে যাওয়ায় তাদের গোড়ালিও ডুবছে না। ফলে ওদের স্নান করাতে সমস্যা হচ্ছে। তবে সারাবছরই জল থাকায় ওদের পানীয় জলের সমস্যা কখনও হয় না।’