নাগরাকাটাঃ শনিবারও তীব্র গরমে চূড়ান্ত নাকাল হলেন জলপাইগুড়িবাসী। এদিন ডুয়ার্সের আইভিল চা বাগানে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে। তীব্র রোদে ডুয়ার্সের চা বাগানে উৎপাদন কমার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, শনিবার জলপাইগুড়ির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। শনিবার জলপাইগুড়ি ছিল চলতি শতকের উষ্ণতম দিন। ৩৮ বছর আগে ১৯৮৬ সালের ২১ জুলাই জেলায় সর্বোচ্চ ৪০.৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের রেকর্ড অবশ্য এখনও অক্ষত। আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা জানান, ‘রেমাল’ সমস্ত মেঘ টেনে নিয়েছে। ওই ঘূর্ণিঝড় জলীয় বাষ্পভরা মেঘ নিয়ে এগোচ্ছে। ফলে, রবিবার বিকাল থেকেই আবহাওয়ার বদল ঘটবে। শনিবার সন্ধে থেকেই উত্তরবঙ্গের আকাশে মেঘের আনাগোনা চলছে।
ডুয়ার্সের চা শিল্প যে প্রকৃতই রোদে পুড়ে ছারখার হতে চলেছে তা ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইটিপিএ) তথ্যেই স্পষ্ট। সংগঠনটি এদিন বেশকিছু চা বাগানের নাম উল্লেখ করে জানিয়েছে, চলতি মাসে কোথাও উৎপাদনের ঘাটতি ৯০ শতাংশ আবার কোথাও ৮০ শতাংশ। যেমন বীরপাড়া (৯০ শতাংশ), সরুগাঁও (৮০ শতাংশ), সরস্বতীপুর (৭৫ শতাংশ), গুরজংঝোরা (৭৫ শতাংশ), শ্রীনাথপুর (৭০ শতাংশ)। মালবাজারের সাইলি চা বাগানে গত বছরের মে মাসে মোট উৎপাদন ছিল ৮৬ হাজার কিলোগ্রাম, এবার এখনও পর্যন্ত তা নেমে এসেছে ১২ হাজার কিলোগ্রামে। আইটিপিএ-র উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘আমার পেশাগত জীবনে এমন অভিজ্ঞতা অতীতে কখনও হয়নি।’ সংগঠনটির ডুয়ার্স শাখার সম্পাদক রামঅবতার শর্মা জানান, নজিরবিহীন অনাবৃষ্টির সমস্যা তো ছিলই, এর সঙ্গে গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো অস্বাভাবিক তাপমাত্রা চা গাছগুলির জীবনীশক্তি নষ্ট করে দিচ্ছে। পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে নানা লোকাচারের আশ্রয় নিচ্ছে বাগানগুলি। শনিবার বিকালে বামনডাঙ্গা চা বাগানে বৃষ্টির প্রত্যাশায় ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়। সেখানকার কালী মন্দিরে বাগান কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ছিল পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়ার আয়োজনও। পাত্রপক্ষ বন্দে ওরাওঁ ও পাত্রীপক্ষ ডিগবয় মুন্ডা নামে দুই শ্রমিক জানান, এবার মনে হচ্ছে পরিস্থিতি বদলাবে। বামনডাঙ্গা চা বাগানের সহকারী পরিচালক অর্ণব মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘সমস্ত চা গাছ শুকিয়ে গিয়েছে। যে যা বলছেন তাই করছি। ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে যদি বৃষ্টি আসে মন্দ কী!’