অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: ‘বন্ধুত্ব’ শব্দের মধ্যে রয়েছে একটা মাধুর্য। তারই উদাহরণ উঠে এল জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) থেকে৷ ‘স্বপ্ন’ থেকেই শুরু বাসন্তীপুজো (Basanti Puja)। সেই পুজো করেন না কোনও ব্রাহ্মণ। পাঁচদিন ধরে পৌরোহিত্য করেন সানুপাড়ার বাসিন্দা আবির বসু। আর প্রতিমা! তাও তৈরি করেন বন্ধু পাতকাটা কলোনির রূপম বিশ্বাস। প্রতিমা গড়ার কাজ মোটামুটি শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। দুই বন্ধুর যুগলবন্দিতে মুগ্ধ পাড়াপ্রতিবেশী থেকে আত্মীয়স্বজন।
সালটা ছিল ২০০০। স্বপ্ন পায় সানুপাড়ার বাসিন্দা আবির। সেই থেকেই বাড়িতে শুরু হয় বাসন্তীপুজো। বন্ধু রূপমও পেয়ে যায় অক্সিজেন। ছোটবেলা থেকে লক্ষ্মী-সরস্বতী বানিয়ে থাকলেও বড় প্রতিমা সেভাবে বানিয়ে ওঠা হয়নি। ব্যাস সেই থেকেই শুরু বাসন্তী প্রতিমা বানানোর কাজ। আবির টিউশন পড়ানোর পাশাপাশি বেশ কিছু ইনস্ট্রুমেন্ট বাজানো শেখায়। অন্যদিকে রূপম একজন স্বাস্থ্যকর্মী। প্রতিদিনই দুজন দুজনের কাজে ব্যস্ত থাকেন। শনি-রবিবার কিছুটা করে সময় দিয়ে প্রায় ৩ মাসে প্রতিমা গড়েছেন তাঁরা।
এবিষয়ে রূপম বলেন, ‘কারও কাছ থেকে হাতেকলমে শেখা হয়নি। চলার পথে মৃৎশিল্পীদের কাজ দাঁড়িয়ে থেকে দেখতাম। বাড়িতে যা থাকত তা দিয়েই ছোট প্রতিমা, শোপিস বানাতাম।’ বর্তমানে কুমোরটুলির মহিলা মৃৎশিল্পী মালা পালের হাত ধরে শেখার চেষ্টা করছি। আর এরপরই বাসন্তী প্রতিমার ছেলেমেয়েদের চোখ, মুখ, আঙুলে কিছুটা কুমোরটুলির টান দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমার মূল উদ্দেশ্য হল ওই ধাঁচ, নকশা জলপাইগুড়িতে ছড়িয়ে দেওয়ার। সেজন্যই কলকাতা থেকে সাজসজ্জার মুকুট সহ যাবতীয় জিনিস আনা হয়েছে এবছর। খুবই ভালো লাগে প্রতিমা বানাতে। এসময় মনে হয় সব ক্লান্তির অবসান ঘটল।’
অন্যদিকে সানুপাড়ার আবির বসু বলেন, ‘পৌরোহিত্য করছি বলে অনেকে ভাবতে পারেন আমি ব্রাহ্মণ না হয়ে কী করে এই কাজ করছি। আসলে আমার মতে পুজো করতে ভক্তি লাগে। তা থাকলে পুরোহিতদের যে সবসময় দরকার হবে, সেটা ঠিক নয়। আমি ভালোবেসে, ভক্তিভরে মায়ের আরাধনা করি। বাড়ির সকলে এই পুজোতে সাহায্য করে, তাই পুজো করতে কোনও সমস্যাই হয় না।’
আবির-রূপমের বন্ধুত্ব দেখে সানুপাড়ার বাসিন্দা মিঠুন রায় বলেন, ‘ওঁদের দেখলে এত ভালো লাগে যে কী বলব। আজকাল যুগের ছেলেমেয়েদের সময় পেলেই আড্ডা দিতে দেখা যায়। আর ওরা প্রতিমা বানায়, গানবাজনা করে। বেশ ভালো দিক এটা।’