অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: পয়লা বৈশাখের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে বাংলা পঞ্জিকা। বছরের প্রথম দিন পঞ্জিকার পাতা ওলটাতে ওলটাতে বাৎসরিক রাশিফল, পুজোর দিন, তারিখ দেখে নেওয়াটা বাঙালি জীবনের একটা নস্টালজিয়া। এখন সময় বদলেছে। ইন্টারনেট (Internet), সোশ্যাল মিডিয়ার (Social Media) যুগে সবকিছুই হাতের মুঠোয়। দিনক্ষণ দেখার জন্য এখন আর আলাদা করে পঞ্জিকার পাতা ওলটাতে হয় না। কিন্তু মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) শহরের বুকে ধরা পড়ল উলটো ছবি। দিনবাজার, টেম্পল স্ট্রিট, কামারপাড়া সহ বেশ কিছু জায়গার দশকর্মা ভাণ্ডারের দোকানগুলিতে পঞ্জিকা কিনতে ভিড় করলেন অনেকেই।
এদিন দিনবাজারের একটি দোকানে পঞ্জিকার পাতা ওলটাতে ওলটাতে সঞ্চিতা রাউত বলেন, ‘হাতে অ্যানড্রয়েড ফোন, ইন্টারনেটের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও পঞ্জিকার জুড়ি মেলা ভার।’ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন রিতা প্রামাণিক। তাঁর কথায়, ‘মোবাইলে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ দেখে ভরসা পাই না। যতক্ষণ না পঞ্জিকা দেখব তৃপ্তি আসে না।’
এদিকে রাজু দাস, তপন শিকদার, বুবাই রাউতদের মতো অধিকাংশ দোকানদারের বক্তব্য, পয়লা বৈশাখ আসার আগে থেকেই দোকানে পঞ্জিকার খোঁজ লেগে যায়। এক-একটি বান্ডিলে ৩০ পিস করে থাকে। কেউ ২০, আবার কেউ ৩০টির বান্ডিল কেনেন। এমনও হয়, পরেও কেউ কেউ পঞ্জিকা চান। স্টক শেষ হলে নিয়ে আসতে হয়। পঞ্জিকার চাহিদা কমবে না বলেই তাঁরা দাবি করেন।
আজকাল মোবাইল অ্যাপে উঁকি দিচ্ছে পঞ্জিকা। তবুও বাড়িতে পঞ্জিকা থাকলে পূজার্চনায় বেশ সুবিধে হয় বলেই জানান গৃহবধূ সুস্মিতা দেব রায়। তিনি বলেন, ‘মা-বাবার কাছ থেকে আমরা অনেক ধৈর্য নিয়ে পঞ্জিকা দেখা শিখেছিলাম। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে মোবাইল চালানো বাদ দিয়ে পঞ্জিকা দেখা শিখতে যাওয়া মানে ওয়েস্ট অফ টাইম।’
এবিষয়ে অবশ্য পুরোহিত সঞ্জয় চক্রবর্তী ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিয়ে, অন্নপ্রাশন, উপনয়নের সময়, তারিখ, তিথি, নক্ষত্র দেখা একদমই পছন্দ করেন না। তাঁর মতে, ‘পঞ্জিকাই বেস্ট। এর কোনও বিকল্প নেই।’
ডিজিটাল যুগে পুরোনো অনেক কিছুই ব্রাত্য হতে বসেছে। কিন্তু নববর্ষের আগে পুরোনো সেই চাহিদা এখনও ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বাংলা পঞ্জিকা। ধরে রাখবে নাই বা কেন? কবে একাদশী, দুর্গাপুজোর নির্ঘণ্ট কী, কবে অম্বুবাচি, বাড়ির ভিতপুজোর তিথি অনুযায়ী শুভক্ষণ কখন? সমস্ত প্রশ্নের উত্তর যে রয়েছে একমাত্র বাঙালির পঞ্জিকাতেই।