সৌরভ দেব, জলপাইগুড়ি: মর্গে মৃতদেহের স্তূপ। পুরসভার তরফে মৃতদেহ না সরানোয় মর্গের জন্য আনা নতুন চিলার মেশিন বসাতে পারছে না মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। দাবিদারহীন দেহগুলো সরানোর ক্ষেত্রে পুর কর্তৃপক্ষ উদাসীন বলে অভিযোগ। এদিকে, মৃতদেহগুলো জমে থাকায় অত্যধিক গরমে মাঝেমধ্যেই দুর্গন্ধ টেকা দায় হয় মেডিকেল কলেজের সুপারস্পেশালিটি বিভাগের রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়পরিজনদের।
জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) মেডিকেল কলেজের এমএসভিপি ডাঃ কল্যাণ খান বলেন, ‘মর্গ থেকে মৃতদেহ না গেলে নতুন চিলার মেশিন বসানো যাচ্ছে না। আমরা পুরসভাকে এই সমস্যার বিষয়টি জানিয়েছি।’
মেডিকেল কলেজ সূত্রে খবর, প্রায় ৩০টি দাবিদারহীন মৃতদেহ সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল সংলগ্ন নতুন মর্গে জমে রয়েছে। সেগুলো সরানো হচ্ছে না কেন? পুরসভা সূত্রে খবর, যিনি এই মৃতদেহ সরানোর কাজ করেন, তিনি অসুস্থ থাকার কারণে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। পুরসভার চেয়ারপার্সন পাপিয়া পাল বলেন, ‘মর্গের মৃতদেহ সৎকারের জন্য প্রয়োজনীয় নথি দরকার হয়। আমাকে মেডিকেল কলেজে থেকে ফোন করা হয়েছিল। শুনেছি তারা দাবিদারহীন মৃতদেহ সৎকারের প্রয়োজনীয় কাগজ পাঠিয়ে দিয়েছে। আমরা এক-দু’দিনের মধ্যেই মৃতদেহ সরানোর ব্যবস্থা করছি।’
তবে, এই মৃতদেহ সৎকার নিয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে দপ্তরগুলোর সমন্বয়ের অভাবে একটা টানাপোড়েন চলছে। একটা সময় সুপারস্পেশালিটির মর্গে দাবিদারহীন মৃতদেহের সংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পঁচা গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে ডাক্তারবাবুরা সেখানে ময়নাতদন্ত করা একপ্রকার বন্ধ করে দেন। তখন থেকে জেলা হাসপাতালের পুরোনো মর্গে শুরু হয় ময়নাতদন্ত। মাঝে সুপারস্পেশালিটির মর্গে সিকিমের প্রাকৃতিক দুর্যোগে তিস্তায় ভেসে আসা দাবিদারহীন মৃতদেহগুলোও রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে সেগুলোকে সৎকার করা হয়।
সুপারস্পেশালিটির মর্গে ৩০টি মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য আলাদা আলাদা ৩০টি চিলার মেশিন ছিল। অতিরিক্তি মৃতদেহর চাপ বহন করতে না পেরে খারাপ হয়ে যায় সেই মেশিনগুলো। নতুন করে সুপারস্পেশালিটির জন্য আবারও ৩০টি এবং জেলা হাসপাতালের পুরোনো মর্গের জন্য ১৬টি চিলার মেশিন বরাদ্দ হয়।
ইতিমধ্যে পুরোনো মর্গে ১৬টি চিলার মেশিন বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি আসা দাবিদারহীন মৃতদেহগুলো জেলা হাসপাতালের পুরোনো মর্গের চিলার মেশিনে রাখা হচ্ছে।
অন্যদিকে, সুপারস্পেশালিটির জন্য নতুন চিলার মেশিন আনার পরেও সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে মর্গে পড়ে রয়েছে। পুরোনো বিকল হয়ে যাওয়া চিলারগুলোর ভেতর দাবিদারহীন মৃতদেহগুলো থাকায় সেগুলোকে মর্গের ভেতর থেকে সরিয়ে নতুন মেশিন বসানোর কাজ শুরু করতে পারছে না মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।