অভিরূপ দে, ময়নাগুড়ি: ঠাকুরদা ছিলেন এলাকার জমিদার। জমিদারির অবসান হলেও ‘রায়বাড়ি’র পরিচয় ছিল জমিদারবাড়ি হিসেবেই। রবিবারের ঝড়ে (Jalpaiguri storm) সেই বাড়ি পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। সব হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থা গোটা পরিবারের। আঘাত নিয়ে এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন পরিবারের সাত সদস্য। বাড়ির সবথেকে কনিষ্ঠ সদস্যা পিহু রায় গুরুতর আঘাত নিয়ে শিলিগুড়ির (Siliguri) একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি।
ময়নাগুড়ির (Maynaguri) বার্নিশ গ্রাম পঞ্চায়েতের সর্দারবাড়ি এলাকার মেঠোপথ ধরে কিছুটা গেলেই শাল, সেগুন, শিমুলঘেরা রায়বাড়ি। সেখানে যৌথভাবেই বসবাস করতেন এলাকার এক সময়ের জমিদার কৃষ্ণমোহন রায়ের নাতি-নাতনিরা। বাড়ির উত্তরদিকে ছিল বিশাল তালপুকুর। সেখানে জলকেলি করত হাঁসের দল। আর চারদিকে নারকেল, সুপারি গাছের সারি। দক্ষিণে পাকা ঠাকুরদালান। সেখানে প্রতিবছর নিয়ম করে ঢাকঢোল পিটিয়ে দক্ষিণাকালীর পুজো হত। বাড়িতে প্রবেশের জন্য ছিল সিংহদুয়ার।
রবিবারের ঝড়ে গোটা বাড়ির চিত্রটাই বদলে গিয়েছে। পরিবারের সদস্যরাও নিজেদের বাড়ি ঠিকমতো চিনতে পারছেন না। বাড়িটির মোট ১১টি ঘর ছিল। এখন সেগুলির চিহ্নমাত্র নেই। হাতে গোনা কয়েকটি নারকেল গাছ ছাড়া সমস্ত গাছ সমূলে উপড়ে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পরে পুকুরের সব জল আশ্চর্যজনকভাবে শুকিয়ে গিয়েছে। পুকুরের মাছ, হাঁস, মুরগি সবকিছুর মৃত্যু হয়েছে। ঠাকুরদালানের সমস্ত পিলার ভেঙে পড়ে রয়েছে। উঠোনে দুটি মোটর সাইকেল ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে।
মঙ্গলবার জমিদারবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদে চলেছেন জমিদারের দুই নাতি বিপ্লব রায় ও অপূর্ব রায়। ঝড়ের তাণ্ডবে পরিবারের এই দুজন সদস্যরই কেবল আঘাত লাগেনি। বিপ্লব বলেন, ‘ঝড়ের সময় অন্যত্র ছিলাম। সেকারণে প্রাণে বেঁচে যাই। কিন্তু বাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত। স্ত্রী, সন্তান সহ পরিবারের সাতজন সদস্য এখনও হাসপাতালে। প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া ঘুড়ে দাঁড়ানো অসম্ভব।’ অপূর্বর কথায়, ‘একসময় আমাদের বংশের জমিদারি থাকলেও বেশ কয়েকবছর থেকে সংসারে অনটন। পরিবারের চার সদস্য ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করে। ঝড়ের জন্য গোটা পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেল।’
এদিন সকালে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িটি পরিদর্শন করেন জলপাইগুড়ির ডিএসপি ক্রাইম রুদ্রনারায়ণ সাউ। এরপর পুলিশের তরফে তাঁদের কাছে কিছু শুকনো খাবার পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রায় পরিবারের আত্মীয় বাপ্পা রায় জানান, খাবারের পাশাপাশি রায়বাড়িতে এখন পানীয় জলেরও অভাব রয়েছে।