আসানসোল: স্ত্রীকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল স্বামীর বিরুদ্ধে। রবিবার ঝাড়খণ্ডের তীসরা থানার খাস কুইয়া ১৪ নম্বর ওবি ড্যাম্প সংলগ্ন জঙ্গল থেকে সুনিতা শর্মা (৩৬) নামে ওই মহিলার দেহ উদ্ধার হয়। এদিকে, ঘটনার পর থেকে পলাতক স্বামী উমেশ শর্মা। এই ঘটনায় সুনিতার ভাই লালবাবু শর্মা তীসরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৫ বছর আগে আসানসোলের বার্ণপুরের বাসিন্দা সুনিতার সঙ্গে বিয়ে হয় ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের একটি বেসরকারি স্কুলের গাড়ি চালক উমেশের। তাঁদের দুই মেয়ে রয়েছে। তার মধ্যে বড় মেয়ে নয়না দুর্গাপুরে মাসির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। সুনিতা ছোট মেয়ে সুনয়নাকে (১০) নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ধানবাদে থাকতেন। গত কয়েক মাস ধরে স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সুনিতা ছোট মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে আসেন। তখন থেকেই তিনি বাপের বাড়িতে ছিলেন। শনিবার উমেশ ফোন করে সুনিতাকে জানান, তিনি সব ঝামেলা মিটিয়ে নিতে চান। সুনিতা যেন মেয়েকে নিয়ে চলে আসেন। এরপর সুনিতা বাপের বাড়ির লোকেদের বুঝিয়ে শনিবার মেয়েকে নিয়ে আসানসোল থেকে ট্রেনে চাপেন। স্ত্রী ও মেয়েকে নিতে আসার জন্য উমেশ গাড়ি নিয়ে ধানবাদ স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। জানা গিয়েছে, সুনিতা ও মেয়েকে উমেশ ধানবাদ স্টেশনের কাছে দোকানে খাবার খাওয়ান ও তাঁদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারও করেন। এরপর উমেশ তাঁদের গাড়িতে চাপিয়ে রওনা দেন। কিন্তু ধানবাদ শহরের দিকে না নিয়ে গিয়ে উমেশ স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে অন্যদিকে যান। অনেক রাতের দিকে তীসরা থানার খাস কুইয়া ১৪ নম্বর ওবি ড্যাম্প লাগোয়া জঙ্গলের রাস্তায় উমেশ গাড়ি থামান। আচমকাই তিনি গাড়ি থেকে লোহার রড বার করে সুনিতাকে মারধর শুরু করেন। মাকে মারতে দেখে মেয়ে সুনয়না আটকাতে যায়। মেয়েকেও উমেশ লোহার রড দিয়ে মারেন বলে অভিযোগ। তাতে দু’জনই অচৈতন্য হয়ে যান। মারা গিয়েছে এই ভেবে উমেশ স্ত্রী ও মেয়েকে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান। মাঝরাতে সুনয়নার জ্ঞান ফেরে। অন্ধকারের মধ্যে কোনওমতে সে জঙ্গল থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। বেশ কিছুটা আসার পর ধানসা থানা এলাকায় সে পৌঁছোয়। ভোররাতে একা মেয়েকে দেখে এলাকার বাসিন্দারা তাকে আটকায়। কাঁদতে কাঁদতে সে সব কথা তাঁদের বলে। তখন এলাকার বাসিন্দারা মেয়েটিকে ধানসা থানায় নিয়ে যান।
এদিকে, লালবাবু শর্মা ফোনে বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে শনিবার রাতেই ধানবাদে পৌঁছে যান। তিনি তীসরা থানায় সব ঘটনা বলে বোনের নিখোঁজের ডায়েরি করেন। এরপর পুলিশ সুনিতার মোবাইল ফোন ট্র্যাক করা শুরু করে। গভীর রাতের দিকে তীসরা থানার পুলিশ জঙ্গলের মধ্যে এক মহিলার মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর পায়। পুলিশ গিয়ে সেই মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে লালবাবু শর্মা সেই দেহ শনাক্ত করেন। অন্যদিকে, তীসরা থানার পুলিশ জানতে পারে, ধানসা থানার পুলিশ সুনিতার মেয়েকে পেয়েছে। রবিবার সকালে সুনিতার মেয়েকে পুলিশ লালবাবু শর্মার হাতে তুলে দেয়।
তীসরা থানার পুলিশ জানায়, ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। পরিবারের তরফে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত স্বামী পলাতক।