কালিয়াগঞ্জ: ৪০৬ জন পড়ুয়ার জন্য রান্না হয়েছে ২২ কেজি চালের ভাত, ছিল না চালের কোনও স্টক রেজিস্ট্রার। ক্যাশবুকও রক্ষনাবেক্ষণ করা হয়নি বেশ কিছুদিন ধরে। হঠাৎ পরিদর্শনে গিয়ে কালিয়াগঞ্জের পার্বতী সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন বিবিধ দুর্নীতির হদিস পেলেন পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত নোডাল অফিসার। জানা গিয়েছে, জেলাশাসকের নির্দেশ মতো পুর এলাকার ছয়টি উচ্চ বিদ্যালয়ের মিড-ডে মিল সংক্রান্ত বিষয়গুলি দেখার দায়িত্ব কালিয়াগঞ্জ পুরসভার। এর দায়িত্বপ্রাপ্ত নোডাল অফিসার হলেন কালিয়াগঞ্জ পুরসভার ফিনান্স অফিসার সমীর মণ্ডল। ২৪ অগাস্ট উনি আচমকাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নন্দন সাহাকে নিয়ে কালিয়াগঞ্জ পার্বতী সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের মিড ডে মিল বিভাগে পরিদর্শনে যান।
সরকারি গাইডলাইন অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির প্রতিটি ছাত্রদের জন্য ১০০ গ্রাম চালের ভাত এবং ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি ছাত্র প্রতি ১৫০ গ্রাম চালের ভাত বরাদ্দ রয়েছে। সেখানে সেদিন ছাত্রদের উপস্থিতি অনুযায়ী ৪০ কেজি উপরে ভাত রান্না করার কথা ছিল। কিন্তু, ওই স্কুলের মিড-ডে মিল রান্নায় যুক্ত রাধুঁনির কথা অনুযায়ী তা হয়নি। এমনকী স্কুলের একটি অস্বাস্থ্যকর ঘরে মিড-ডে মিলের চাল রাখায় অধিকাংশ চালে পোকা ধরে গিয়েছিল। তা কোনও ভাবেই খাবার উপযোগী অবস্থায় ছিল না বলেও তদন্তে উঠে এসেছে।
এমনকি মিড-ডে মিল সংক্রান্ত কোন বিল সঠিক ভাবে পরিদর্শনের সময় পাওয়া যায়নি। জানা গিয়েছে, মিড ডে মিলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েকবার এই স্কুলের এক কর্মীকে টাকা দেওয়া হয়েছে। ওই টাকা নাকি স্কুলের স্টাফ দোকানদারকে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। স্কুলের মিড ডে মিলের ঘরের আশেপাশে কোথাও সাপ্তাহিক খাদ্য তালিকা লেখা মেনু বোর্ডের দেখা মেলেনি।
স্কুলের মিড-ডে মিলের সাপ্লায়ারের ভাউচারে জিনিসের নাম লেখা থাকলেও কোনটা কত পরিমাণ দেওয়া হয়েছে তা লিপিবদ্ধ নেই। এই ভাবেই সাপ্লায়ার নিজস্ব প্যাডে রেভেনিউ স্ট্যাম্পের উপর সই করে কয়েক হাজার টাকা স্কুল থেকে তুলেছেন। সাপ্লায়ারের প্যাডে ট্রেড লাইসেন্স নম্বরও নেই। সে কারণে, এই স্কুলের মিড ডে মিলের সাপ্লায়ারের বিরুদ্ধেও উঠছে নানা প্রশ্ন। সমীর মণ্ডল জানান, ‘এমন বিবিধ অনিয়ম মেলায় ২৬ অগাস্ট আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে শোকজ করে তিনদিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’
বিষয়টি কানে যেতেই রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সত্যজিৎ বর্মনের বক্তব্য, ‘ওই স্কুলের মিড-ডে মিল নিয়ে যদি দুর্নীতি প্রমাণ হয় তাহলে, ওই শিক্ষকের শাস্তি হবে। আমিও বিষয়টি নজরে রাখছি।’ ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নন্দন কুমার সাহা জানান, শোকজ করা মানেই কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাওয়া নয়। শোকজের জবাব দেওয়া হবে। অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়ে ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অমিত সাহা জানান, মিড-ডে মিলের ঘরে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, রান্না যেন ঠিকঠাক হয়, বাচ্চারা যাতে আরও ভালো খেতে পারে, সেদিকে আমরা নজর দেব। কালিয়াগঞ্জ পুরসভার পুরপ্রধান রামনিবাস সাহার বক্তব্য, ‘জেলাশাসকের নির্দেশেই শহরের ছয়টি হাই স্কুলের মিড-ডে মিলের ব্যবস্থাপনাকে ঘিরে পরিদর্শন শুরু হয়েছে। কালিয়াগঞ্জ পার্বতী সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের মিড ডে মিলকে ঘিরে অনেকদিন ধরেই দুর্নীতির খবর আসছিল। তাই এই স্কুল থেকেই পরিদর্শন শুরু করা হয়েছে।’