প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: লোকসভায় বিতর্কিত দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিলের বিরোধিতা করতে গিয়ে মণিপুরের রাজ্যপাল অনুসূয়া উইকের ভূয়সী প্রশংসা, অন্যদিকে নাম না করেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ষীয়ান সাংসদ-আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়৷
বৃহষ্পতিবার বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধি সাংসদরা যখন একে একে দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিলকে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা তথা শীর্ষ আদালতে অবস্থানকে অগ্রাহ্য করে নিজ ক্ষমতার আস্ফালনের নামান্তর বলে অভিযোগ করছেন, ঠিক সেই সময়ে সংশ্লিষ্ট বিলটির প্রেক্ষিতে সরকারপক্ষের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর কথায়, ‘আমজনতার নির্বাচিত সরকারকে নিশানা করার জন্যই এই বিল নিয়ে আসা হয়েছে৷ এই বিল অবৈধ, চরম অসাংবিধানিক। আমাদের দেশের সংবিধান এই ধরণের বিলকে বৈধতা দেয় না, যেখানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে৷’ এর পরেই শাসক শিবিরের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোতে জনতার রায়ই শেষ কথা৷ এমন কোনও কাজ করবেন না যে ২৫ বছর পরে ভবিষ্যত প্রজন্ম প্রশ্ন করে কেন আমরা এই কাজ করলাম! আপনারা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে ধ্বংস করতে চাইছেন কি না, সেটাই বড় কথা৷’
এই মর্মেই নাম না করে বাংলার রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে কল্যাণের প্রশ্ন, ‘বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যপাল তাঁর সাংবিধানিক গন্ডির বাইরে গিয়ে এত সক্রিয় কেন? কেন তাঁরা সংবিধানের ধারার বাইরে গিয়ে কাজ করবেন? রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের করা যাবে না, এই রক্ষাকবচ থাকার জন্যই তাঁরা সংবিধানের বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারছেন৷’ কল্যাণের সংযোজন, ‘বিরোধী শাসিত রাজ্যে সামান্য কারণে ঘনঘন মানবাধিকার কমিশন, মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি দলকে পাঠানো হলেও কেন এই দলগুলি মণিপুরে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি দেখার প্রয়োজন মনে করল না?’
উল্লেখ্য, দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিলের বিরোধিতা প্রসঙ্গে সংবিধান প্রণেতা বাবাসাহেব ভীমরাও আন্বেদকরের উক্তি তুলে ধরেছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দেশের শীর্ষ আদালতের বিচারপতিদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তাঁর সওয়াল- ‘আমাদের দেশের সংবিধান সাফ বলেছে এখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর অংশে একটি রাজ্য কখনই কেন্দ্রের অধীনে থাকবে না৷ রাজ্যগুলির স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে৷ তারপরেও কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিলের মাধ্যমে দিল্লি সরকারের সব ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে যেখানে যাবতীয় আইএএস-দের নিয়ন্ত্রণ করবে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এই ভাবে আমজনতার রায়ে নির্বাচিত দিল্লি সরকারের ক্ষমতাকে খর্ব করা যায় না৷’
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের বিরোধিতায় পাল্টা যুক্তি পেশ করার চেষ্টা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী৷ দু পক্ষের তীব্র বাদানুবাদে লোকসভা সাময়িকভাবে উত্তপ্ত হয়৷ সেই সময়েই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মণিপুরের রাজ্যপালের ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন৷ তিনি বলেন, ‘এ যাবত যত রাজ্যপাল চোখে পড়েছে তাদের মধ্যে নি:সন্দেহে ব্যতিক্রম মণিপুরের রাজ্যপাল। তিনি নিজে উপদ্রুত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে পরিস্থিতি তদারকি করেছেন, নি:স্বার্থ ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’ কল্যাণ যখন নাম না করে মণিপুর রাজ্যপাল অনুসূয়া উইকের ভূয়সী প্রশংসা করছেন, লোকসভায় উপস্থিত শাসক দলীয় প্রতিনিধিদের একাংশ ভাবেন, কল্যাণ বুঝি উইকের বিরুদ্ধে কুকথা বলছেন যা নিয়ে তাঁরা সরব হন। পরে ভুল বুঝতে পেরে রনেভঙ্গ দেন বিজেপির সাংসদ দলের একাংশ।