কৌশিক দাস, ক্রান্তি: জীবন ও জীবিকার সন্ধানে ভিনরাজ্যে গিয়ে কফিনবন্দি দেহ ফিরে আসে অনেকের। দুর্ঘটনায় কারও কারও অঙ্গহানি হয়। ভাগ্য ফেরাতে গিয়ে, মেনে নিতে হয় ভাগ্যের পরিহাস। ভোট আসে, ভোট যায় কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrant Worker) কথা ভাবে না কোনও দল। বছরের পর বছর অভাব, দারিদ্র্য নিয়ে দিন গুজরান করছে বহু শ্রমিক পরিবার।
ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে অঙ্গ খুইয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী তপন রায়। ক্রান্তি (Kranti) ব্লকের রাজাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর বারোঘরিয়ার ওই তরুণ বছর কয়েক আগে জীবিকার সন্ধানে তামিলনাডু গিয়েছিলেন। ইলেক্ট্রিক শকে গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘদিন সেখানেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মাস দেড়েক আগে বাড়ি ফিরেছেন।
এখন নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর অবস্থা সংসারে। কিন্তু কিছুই করার নেই তাঁর। অসহায়ের মতো চেয়ে দেখা ছাড়া। এরই মধ্যে ভোটের (Lok Sabha Election 2024) দামামা বাজলেও তপনের খবর নেয়নি কেউই। নির্বাচনি প্রচারে গিয়ে নেতারা যখন লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে জনসেবার সুযোগ দিতে ভোটভিক্ষা করছেন তখন বাড়িতে স্ত্রী, দুই খুদে সন্তান নিয়ে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে তপনের পরিবার।
শয্যাশায়ী তপন বলেন, ‘কী আর করা যাবে, ভাগ্যের পরিহাস! কোয়েম্বাটুরে একটি সংস্থার পণ্যবাহী গাড়ি পরিষ্কার করছিলাম। গাড়িটি কোনওভাবে বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে চলে আসে। অন্য শ্রমিকরা তাড়াতাড়ি ইলেক্ট্রিক কানেকশন বিচ্ছিন্ন না করলে সেদিনই মারা যেতাম। এরপর যমে-মানুষে টানাটানি চলে। প্রাণে বাঁচলেও দুটো হাত-পা’ই কাটা গিয়েছে আমার। ঠিকাদারি সংস্থা সামান্য অনুদান দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয়। সামান্য ওই টাকায় ক’টা দিনই বা চলে!’
স্বামীকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছিলেন স্ত্রী স্বপ্না রায়। বাইরে চিন্তামগ্ন তপনের বাবা চৈবনাথ রায় ও মা সুনীতি রায়। বাড়ির পাশেই খেলতে ব্যস্ত তৃতীয় ও প্রথম শ্রেণিতে পড়া ফুটফুটে দুটি ভাইবোন সুইটি ও আদিত্য। স্বপ্নার কথায়, ‘কোনওরকমভাবে দিন চলছে। পরিবারের ছ’জনের খাওয়ার খরচ, ওষুধের খরচ চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।’
তপনরা দুই ভাই। ছোট থেকেই দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে বড় হওয়া তপন কাজের সন্ধানে বছর বারো আগে তামিলনাডু যান। এর কয়েক বছর পর ভাইকেও সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। দাদা-ভাই দুজনেই তামিলনাডুর কোয়েম্বাটুর জেলায় একই সংস্থায় কাজ করছিলেন।
সুস্থ সবল বাবাকে এই অবস্থায় দেখে মর্মাহত তপনের দুই সন্তান। তপনের বয়স্ক মা-বাবা দুজনেই দিনমজুরি করে পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। দু’মাস ধরে তাঁদের মুখে র্যাশনের চালের ভাত আর শাকপাতা ছাড়া কিছুই জোটেনি।
ক্রান্তি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পঞ্চানন রায় অবশ্য ভোট মিটলে সাধ্যমতো পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।