কুশমণ্ডি: আসন একটি। কিন্তু সেই আসনের দাবিদার দুই। তা নিয়েই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে গেল কুশমণ্ডিতে। বঞ্চিত প্রার্থীর অনুগামীরা ব্লক সভাপতির গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান। এমনকি, বিধায়ক রেখা রায়ের স্বামীকে হেনস্তা করার অভিযোগও ওঠে বিক্ষুব্ধদের বিরুদ্ধে। টানাটানির জেরে জামা ছিঁড়ে যায় বিধায়ক রেখা রায়ের স্বামী নকুল রায়ের। ঘটনাকে ঘিরে পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে প্রকাশ্যে চলে এসেছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
কুশমণ্ডি ব্লকের তিন নম্বর উদয়পুর পঞ্চায়েত এলাকার ২১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির আসনে তৃণমূল দুজনকে প্রতীক দেয়। এখান থেকেই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিভাজন সামনে চলে আসে। মঙ্গলবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিনে কে টিকিট পাবেন, এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। প্রার্থীদের দাবিদারদের মধ্যে ছিলেন পিউ ঘোষ এবং নার্গিস বেগম। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিনে কুশমণ্ডি ব্লক অফিসে পিউ ঘোষ বসাক বা তাঁর অনুগামীদের দেখা যায়নি। তবে নার্গিস বেগমের লোকজন দলবল নিয়ে হাজির ছিলেন।
উদয়পুর অঞ্চলের বর্ষীয়াণ তৃণমূল নেতা রেজাউল করিম বলেন, ‘দল প্রথমে নার্গিস বেগমকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। সেই প্রার্থীর নাম বাতিল করে দেন কুশমণ্ডির তৃণমূল বিধায়ক রেখা রায়। তাঁর সুপারিশ মতো পরে ২১ নম্বর আসনে পিউ ঘোষ বসাককে ঠিক করে দল। পরে আবার নার্গিসের নাম বাতিল করে পিউ ঘোষ বসাকে অনুমোদন দেয় দল। এরপরেই নার্গিসের লোকজন ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সমস্যার সমাধান করতে ব্লক তৃণমূল সভাপতি কেশব যোশি ব্লক অফিসে এলে তাঁর গাড়ি আটকে ক্ষোভে ফেটে পড়েন নার্গিস বেগমের লোকজন। এরপর কেশব যোশিকে নিরাপদভাবে বের করে দেন তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক রীতেশ জোয়ারদার।
বঙ্গজননীর জেলা সভানেত্রী মিঠু জোয়ারদার দলের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ উগড়ে বলেন, ‘পিউ ঘোষ বসাকের নাম তৃণমূল দল পাঠিয়েছে। আবার তাঁর স্বামী কৃষ্ণ বসাক পঞ্চায়েতের আসনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই ঘটনার পর তড়িঘড়ি টিচার্স কোঅপারেটিভের দোতলায় তৃণমূল ব্লক নেতৃত্ব বৈঠকে বসেন। সেখানে ছিলেন ব্লক সভাপতি কেশব যোশি, বিধায়ক রেখা রায়ের স্বামী নকুল রায়। নকুল রায়কে দেখা মাত্র খেপে ওঠেন তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, টাকা নিয়ে টিকিট বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে নার্গিস বেগমের সমর্থকরা দোতলায় উঠে মিটিং ভণ্ডুল করে দেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। নকুল রায়ের জামার কলার ধরে টানাটানি করে তাঁকে হেনস্তা করা হয়। বিধায়ক রেখা রায়ের স্বামীর জামা নার্গিস বেগম ও তাঁর অনুগামীরা ছিঁড়ে দেন বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বিরাট পুলিশবাহিনী নিয়ে পৌঁছোন আইসি। পুলিশের হস্তক্ষেপে নকুলবাবুকে উদ্ধার করা হয়।
কে তৃণমূলের প্রতীক পাবেন, তা অবশ্য জানাতে পারেননি রিটার্নিং অফিসার তথা বিডিও অমরজ্যোতি সরকার। নার্গিস বেগম টিকিট না পেলে ২১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির আসনের পুকুরপাড়া, মহিপাল, শেরপুর, বাগডুমা, ভেলাকুড়ি, সালেককুরি ও কাপড়িয়া গ্রামের তৃণমূল সমর্থকরা আদতেও আর তৃণমূলকে সমর্থন করবেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ফোন করা হলে তা ধরেননি তৃণমূল নেতা কেশব যোশি বা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি মৃণাল সরকার। তৃণমূলের মুখপাত্র অম্বরীশ সরকার বলেন, ‘দলের অভ্যন্তরে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত সকলকে মানতে হবে।’