শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: শীত পড়লেই গজলডোবায় ভিড় জমায় পরিযায়ী (Migrant Birds) অতিথিরা। কিন্তু এবছর তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গতবারের তুলনায় এবছর শীতে গজলডোবায় (Gajoldoba) পরিযায়ী পাখির সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। এর পিছনে অবশ্য মাসকয়েক আগেকার তিস্তায় বিপর্যয়ের কথাই বলতে চেয়েছেন তাঁরা। এমনকি গত ২৮ বছরের সমীক্ষায় এবারেই গজলডোবায় সবচেয়ে কম পাখি এসেছে বলে জানাচ্ছে হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন(ন্যাফ) (himalayan nature and adventure foundation)।
চলতি সপ্তাহে বন দপ্তরের সহযোগিতায় ন্যাফের সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। সমীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্ট হিসেবে এবারে পাখির সংখ্যা ৪,৫০০ ছাড়াবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। গতবছর গজলডোবায় আসা পাখির সংখ্যা ছিল, ৯০৫০। হঠাৎ করে পাখির সংখ্যা এতটা কমল কীভাবে? সমীক্ষাকারী দলের সদস্য কলকাতার প্রকৃতি সংসদের সহ সম্পাদক বিশিষ্ট পক্ষীবিদ অপূর্ব চক্রবর্তীর আক্ষেপ, ‘তিস্তা বিপর্যয়ের জেরে প্রচুর পলি জমে গিয়েছে। পাখির খাওয়ার মতন জলজ উদ্ভিদ, মাছ কিছুই নেই। পাখি আসার মতন পরিস্থিতিই আর নেই।’ এই অবস্থায় গজলডোবায় আর পাখি আসবে কি না, তা নিয়েও আশঙ্কায় প্রকৃতি সংসদের সহ সম্পাদক।
এদিকে গজলডোবায় না এলে ওই পাখি কোথায় গেল, তা নিয়েও প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে। গজলডোবায় আসা পাখির একটা অংশ ফুলবাড়ির মহানন্দা ব্যারেজে চলে গিয়েছে বলে মনে করছেন সমীক্ষকরা। কারণ, ফুলবাড়িতে ব্যারেজে গতবছর ৫০০০ পাখি এলেও এবারে প্রাথমিক রিপোর্টে সেই সংখ্যা ৬০০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত অক্টোবর মাসে তিস্তা বিপর্যয়ের প্রভাব প্রকৃতির ওপর কতটা পড়েছে, ন্যাফের এই সমীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্টেই তা স্পষ্ট। রিপোর্টে আরও দেখা যাচ্ছে, গতবছর ৮২ প্রজাতির পাখি গজলডোবায় এসেছিল। এবারে সে সংখ্যা কমে ৬৬ হয়েছে। উধাও হয়ে যাওয়া প্রজাতিগুলোর মধ্যে রয়েছে নর্দার্ন পিনটেইল, নর্দার্ন সোভেলার সহ বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস, পরিযায়ী বড় পানকৌড়ি। যারা মূলত জলজ শ্যাওলা সহ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ খেয়েই বেঁচে থাকে। এ প্রসঙ্গে ন্যাফের কোঅর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, ‘গজলডোবায় রুডি শেলডাকের সংখ্যা একেবারেই কমে গিয়েছে। অথচ ওই প্রজাতির হাঁসের সংখ্যা বেড়েছে ফুলবাড়ি ব্যারেজে। আসলে তিস্তার বিপর্যয় গজলডোবায় পাখির আসাটাই পুরোপুরি শেষ করে দিল।’