পারমিতা রায়, শিলিগুড়ি: অনিশ্চয়তাকে ছাপিয়ে নিশ্চয়তার জয়গান। পথ দেখাচ্ছে সবুজ–সঙ্গ। একসময়ে যাঁরা বালি-পাথর তোলা, পাথর ভাঙার মতো নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আজকাল তাঁরা নার্সারিতে যুক্ত। মাটিগাড়া সংলগ্ন পতিরাম এলাকা তাঁদের নতুন দিশা দেখাচ্ছে। এই পতিরামে আজকাল নার্সারি ব্যবসার রমরমা। এই নার্সারিগুলিতে নানা গাছের চারা মেলে, অনেকেই এখানে এসে এসব কিনে নিয়ে যান। বিক্রির বাড়বাড়ন্ত, পাশাপাশি অনেকের সংসার চালানোর পথটারও প্রশস্ত হওয়া।
পতিরাম থেকে কিছুটা দূরেই তুঁতবাগান। মাধবী বর্মন এখান থেকেই সাইকেল চালিয়ে রোজ পতিরামের নার্সারিতে কাজ করতে আসেন। মাধবী একটা সময় বালাসন নদী থেকে বালি-পাথর তোলার কাজ করতেন। সেই কাজে ঝুঁকি বেশি, আয় অনিশ্চিত। আর তাই সঙ্গীদের নিয়ে মাধবীদের নার্সারির কাজে যোগ দেওয়া। মাধবী বলে চলেন, ‘বালি-পাথর তোলার কাজ তো সবসময় হয় না। বছরের অনেক সময় আমাদের খুব কষ্ট করে দিন চালাতে হয়। পাশাপাশি এই কাজে ঝুঁকিও বেশি। তাই নার্সারির কাজে যুক্ত হয়েছি।’ বালাসন কলোনির প্রভাত রায়েরও প্রায় একই বক্তব্য, ‘বালি-পাথর তোলার কাজ সবসময়ই ঝুঁকির। এর আগে বালাসনের সেতু যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আমরা খুবই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। নদী থেকে যাতে আর বালি-পাথর তোলার কাজ না করি সেজন্য স্ত্রী ও মেয়ে সমানে জেদ করছিল। বাধ্য হয়েই নার্সারিতে কাজ নিই। এখানে এসে জীবনের অন্য অর্থ খুঁজে পেয়েছি।’ শিলিগুড়ির পাশাপাশি নকশালবাড়ি, হলদিবাড়ির অনেকেই এই নার্সারি–সঙ্গে নতুন জীবন খুঁজে পেয়েছেন। পতিরামে একসময় বেশি করে চাষবাস হত। এখনও হয়। তবে বাসিন্দারা নানা কাজে যুক্ত হয়ে পড়ায় তা অনেকটা কমেছে। তবে অন্যদিকে, পাল্লা দিয়ে এখানে নার্সারি ব্যবসা বাড়ছে। এখানকার চারাগাছ শিলিগুড়ির বাজার সহ উত্তরবঙ্গের নানা প্রান্তে যায়।
জীবনবদলে নার্সারির মালিকদের অনেকটাই অবদান বলে এমনই এক নার্সারির কর্মী রাজা বর্মন জানালেন। তরুণের কথায়, ‘আমি যেখানে কাজ করি সেখানকার নার্সারির মালিক এসে আমাদের সামনে নতুন জীবনের উদাহরণ তুলে ধরেন। তারপর থেকেই আমাদের জীবনের ভোল বদল।’ শুনে নার্সারির মালিক মহম্মদ বিশ্বাস যেন লজ্জায় ডুবে যান, ‘না না, এ আর এমন কী! সবার ভালো হলে তো আখেরে সমাজটারই লাভ।’