গৌরহরি দাস, কোচবিহার : পথ দুর্ঘটনায় মোহনের মৃত্যু থামার কোনও লক্ষণই নেই। সমস্যা মেটাতে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত।
পথ দুর্ঘটনায় বাণেশ্বরের ঐতিহ্যবাহী কচ্ছপ তথা মোহনের মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। গত এক মাসে বাণেশ্বরে কোচবিহার-আলিপুদুয়ার রাজ্য সড়কে পথ দুর্ঘটনায় প্রায় ৪০টি মোহনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত সোমবার তিনটি, শনিবার চারটি এবং রবিবার পাঁচটি মোহনের মৃত্যু হয়। মোহনদের মৃত্যু ঠেকাতে বাণেশ্বর মোহন রক্ষা কমিটির তরফে ইতিমধ্যেই ৯ নভেম্বর ছয় ঘণ্টার বাণেশ্বর ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। এভাবে মোহনদের মৃত্যুর ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে জনমানসে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ালেও এনিয়ে প্রশাসন ও বন দপ্তরের উদাসীনতায় অনেকেই ক্ষুব্ধ। বাণেশ্বরের সাধারণ বাসিন্দাদের পাশাপাশি বাণেশ্বর মোহন রক্ষা কমিটি ক্ষোভ জানিয়েছে। রবিবার আরও পাঁচটি মোহনের মৃত্যু হওয়ায় ক্ষুব্ধ কমিটি এবারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাণেশ্বর মোহন রক্ষা কমিটির সভাপতি পরিমল বর্মন বলেন, ‘প্রশাসন ও দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের উদাসীনতায় অজানা রোগে কয়েক মাস আগে বাণেশ্বরের শিবদিঘিতে বহু মোহন মারা গেল। এখনও মাঝেমধ্যে তারা মারা যাচ্ছে। প্রশাসনের চরম উদাসীনতায় বছরের পর বছর ধরে বাণেশ্বরের কোচবিহার-আলিপুরদুয়ার সড়কে মোহনদের মৃত্যুমিছিল চলছে। এক মাসে প্রায় ৪০টি মোহনের মৃত্যু হয়েছে।’ মোহনদের মৃত্যু ঠেকাতে পরিমলরা ইতিমধ্যে বহুবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু এনিয়ে প্রশাসন কোনও পদক্ষেপই করছে না বলে অভিযোগ। পরিমলের কথায়, ‘প্রশাসন কী কারণে বাণেশ্বরকে শ্মশানভূমিতে পরিণত করতে চায় তা জানি না। বাণেশ্বরের অর্থনীতির একটি বড় অংশ মোহনদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
কিন্তু এই মোহনদের রক্ষা করতে প্রশাসনের বিন্দুমাত্র কোনও হেলদোল নেই। গোটা বিষয়টি জানিয়ে আমরা নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিচ্ছি।’ এদিন বহুবার জেলা শাসকের মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া না দেওয়ায় তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
কোচবিহার থেকে আলিপুরদুয়ার যাওয়ার পথে শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে কোচবিহার-২ ব্লকের বাণেশ্বর রয়েছে। এলাকাটির সেভাবে কোনও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নেই। তবুও এখানে সবসময় পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। মোহনই এর কারণ। এই মোহনদের কেন্দ্র করেই এখানকার অর্থনীতি। মোহন-দর্শনে বাণেশ্বরে প্রতিদিন শয়ে-শয়ে পর্যটকের ভিড় হয়। এই কারণে জায়গাটি জেলার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে কয়েক মাস আগে অজানা রোগে একাধিক কচ্ছপের মৃত্যুর পর পথ দুর্ঘটনায় কচ্ছপের মৃত্যুর জেরে এনিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
বাণেশ্বর মোহন রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রঞ্জনকুমার শীল বলেন, ‘পথ দুর্ঘটনায় বাণেশ্বরে একের পর এক মোহনের মৃত্যু ঠেকাতে কোচবিহার-আলিপুরদুয়ার সড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে স্পিডগান বসানো, রাস্তার ওই অংশে যানবাহনের গতি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার করা, স্পিডব্রেকার বসানো, আলোর ব্যবস্থা করতে বছরের পর বছর ধরে প্রশাসনকে প্রস্তাব দিয়ে এলেও তারা কিছুই করছে না।’ এভাবে একের পর এক মোহনের মৃত্যুর ঘটনায় রঞ্জন প্রশাসনের ওপর পুরোপুরি দায় চাপিয়েছেন।