সুভাষ বর্মন, শালকুমারহাট: দুজনেরই ছোটবেলা কেটেছে অসমের গৌরীপুরের রাজবাড়িতে। একজন বছর পঁচাত্তরের রঘুনাথ রায়। আরেকজন বছর সাতাত্তরের শ্যামচরণ বোড়ো। রঘুনাথকে পার্বতী ডাকতেন ‘ছোটকা’ বলে। রাজবাড়িতে ছোটকা হাতির দেখভাল করতেন। আর শ্যামচরণ তো পার্বতীর বাবার সঙ্গে বুনো হাতি ধরার কাজ করতেন। তাই দুজনই ছোটবেলা থেকেই চেনেন পার্বতীকে। সেই ‘ছোট্ট’ পার্বতীই আজ পদ্মশ্রী (Padmashreee Award)। রঘুনাথ ও শ্যামচরণ, দুজনেরই কথায়, এতদিন পর প্রতিভার সঠিক মূল্যায়ন হল।
শনিবার দুপুর ১২টা। জলদাপাড়া বনাঞ্চল সংলগ্ন শালকুমারহাটের প্রধানপাড়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, চেয়ার বসে আছেন রঘুনাথ। একসময় জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে মাহুত হিসেবে কাজ করতেন রঘুনাথ। তাঁর জন্মস্থান আলিপুরদুয়ারের মাঝেরডাবরি। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েই পড়াশোনায় ইতি। বাড়িতে গোরু, মোষ ছিল। ছোটবেলাতেই গৌরীপুরের কয়েকজন মাহুতের সঙ্গে পরিচয় মাঝেরডাবরিতেই। সেই সূত্রেই গৌরীপুরে পাড়ি। সেখানে দু’বছর হাতির দেখভালের কাজ করার সময় পার্বতীকে অনেক কাছ থেকে দেখেছেন রঘুনাথ। তারপর সেখান থেকেই মাহুত হিসেবে বক্সায় চাকরির সুযোগ। এরপর জলদাপাড়ার হলংয়ে মাহুতের চাকরি। তারপর প্রধানপাড়ায় বাড়ি। পনেরো বছর আগে অবসর নিয়েছেন। তবে এখনও স্পষ্ট মনে রয়েছে, জলদাপাড়ায় একাধিকবার প্রশিক্ষণ দিতে আসা পার্বতীর সব স্মৃতি। এখানে এলেই পার্বতী ছোটকার বাড়িতে অবশ্যই আসতেন। রঘুনাথের কথায়, ‘পার্বতী দিদির সঙ্গে স্মৃতি তো অনেক। গৌরীপুরে যখন ছিলাম তখন দিদি পড়াশোনা করত। আমি খুব বেশি লম্বা ছিলাম না। তাই ছোটকা বলে ডাকত। সেই সূত্রেই জলদাপাড়া এলেই দিদি আমার বাড়িতেও আসত। শিদলের ছ্যাঁকা খেত।’ সেই পার্বতী এবার পদ্মশ্রী পাচ্ছেন। এই কথা শুনেই মুখে হাসি রঘুনাথের। বললেন, ‘অন্যতম হাতি বিশারদ আমাদের পার্বতী দিদি। এতদিন পর প্রাপ্য সম্মান পেল।’
জলদাপাড়া মৌজাতেই বাড়ি শ্যামচরণ বোড়োর। জন্মস্থান কুমারগ্রামের হলদিবাড়ি। তিনিও রঘুনাথের মতোই মাহুতদের সূত্রে গৌরীপুরে কয়েক বছর কাটান। পার্বতীর অনেক স্মৃতি তাঁরও মনে রয়েছে। কাজ করেছেন পার্বতীর বাবার সঙ্গেও। তাঁর সঙ্গেই বুনো হাতি ধরার জন্য ক্যাম্পে যেতেন। কীভাবে হাতিকে ধরা হবে সেই ফাঁদ তৈরির কৌশল শিখেছেন সেই ক্যাম্পে। এরকম ক্যাম্পে অনেক সময় ছোট্ট পার্বতীও যেত। সেখান থেকেই হাতির দক্ষ মাহুত হিসেবে ভুটানে পাড়ি দেন শ্যামচরণ। প্রতিবেশী দেশে কয়েক বছর চাকরির পর চলে আসেন জলদাপাড়ায়। জলদাপাড়ায় বহুবার প্রশিক্ষণ দিতে এসেছিলেন পার্বতী। তবে শ্যামচরণের মতো দক্ষ মাহুতকে আর পার্বতীর কাছে প্রশিক্ষণ নিতে হত না। তাঁর কথায়, ‘জলদাপাড়ায় পার্বতী দিদির সঙ্গে আমিও অন্যান্য মাহুত, পাতাওয়ালাদের প্রশিক্ষণ দিতাম।’ হাতির সঙ্গে থেকেও যে এমন সম্মান মেলে, তা শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।