মহম্মদ আশরাফুল হক, গোয়ালপোখর: স্ত্রী ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের অভাবে ধুঁকছে লোধন গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র (Lodhan Rural Health Care Centre)। এখানে গর্ভবতীদের সিজারের সমস্ত পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও মেলে না পরিষেবা। নানা অজুহাতে প্রায়ই রোগীদের স্থানান্তরিত (রেফার) করার অভিযোগ ওঠে। ফলে, রোগী ও পরিবারের হয়রানি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএমওএইচ আলিয়া সুলতানা জানান, চিকিৎসক ঘাটতি আগের চেয়ে অনেকটা দূর করা সম্ভব হয়েছে। স্ত্রী ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার করা হয়েছে। সিজারিয়ান সেকশনটি খুব তাড়াতাড়ি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উত্তর দিনাজপুর (Uttar Dinajpur) জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি গোলাম রসুলের কথায়, ‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।’
লোধন গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখন একজন অস্থায়ী সহ মোট ছ’জন চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়েও মেলেনি একজন স্ত্রী ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অথচ শিশুমৃত্যুর হার কমাতে রাজ্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে জোর দেওয়ার কথা বলছে। এনিয়ে গ্রামেগঞ্জে প্রচার চলছে। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় সমস্যায় পড়ছেন রোগীরা। তাঁদের অভিযোগ, এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষ। চিকিৎসা পরিষেবার জন্য তাঁদের ভরসা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু এখানে রোগী ভর্তি করতে আনলেই নানা অজুহাতে তাঁদের অন্যত্র পাঠানো হয়। ফলে, রোগী ও তাঁদের স্বজনরা হয়রানি, ভোগান্তির শিকার হন। শুধু তাই নয়, রোগীদের সুষ্ঠু চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেকে দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সুজেন ঠাকুর জানান, এখানে নামমাত্রই চিকিৎসা হয়। ব্যবস্থা থাকলেও হয় না এক্স-রে। নেই সিজারের ব্যবস্থাও। রোগীদের সবসময় অন্যত্র পাঠানো হয়। তাঁর অভিযোগ, সম্প্রতি গ্রামের এক অন্তঃসত্ত্বাকে দু’দিন আগে এখানে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তাঁকে অন্যত্র পাঠানো হয়। পরে তাঁকে কিশনগঞ্জের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পথে সন্তান প্রসব করেন তিনি। এভাবে রেফারের নামে রোগী নিয়ে হয়রানি শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী। আরেক বাসিন্দা আশিফ রেজা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে শুনছি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সিজারিয়ান সেকশন চালু হবে। কিন্তু এখনও সে উদ্যোগ নজরে পড়ছে না। অথচ এখানে সিজারের সমস্ত পরিকাঠামো তৈরি। নয়া ভবন তৈরি হয়েছে। সিজারের ব্যবস্থা না থাকায় কেউই ঝুঁকি নিচ্ছেন না।
এব্যাপারে কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক নাশিম এহসানের দাবি, এখানে সিজার পরিষেবা চালু করা খুবই জরুরি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিষেবা চালু না থাকায় বিপাকে পড়ছেন মানুষজন। কিছু রাস্তাঘাট সংস্কার করে উন্নয়নের প্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না।