মনোজ বর্মন, শীতলকুচি: উত্তরের রাজবংশী সমাজ হলুদ গামছাকে সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে দেখে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, অতিথি আপ্যায়নে তাঁরা হলুদ গামছা ব্যবহার করে থাকেন। এক কথায় এই গামছা রাজবংশী সমাজের ভাবাবেগের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। রাজবংশীদের মন পেতে তাই ভোটের (Lok sabha election 2024) ময়দানে হলুদ গামছার ব্যবহারও অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সমাজের ভোট প্রতিটি দলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই তৃণমূল, বিজেপি সহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতাদেরই গলায় হলুদ গামছা পরতে দেখা যাচ্ছে।
যদিও বছর কয়েক আগেও এই গামছা ব্যবহার করতেন কেবল উত্তরের ভূমিপুত্রদের বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী ও সমর্থকরা। গত বিধানসভা ভোট থেকেই ছবিটা বদলে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গে নির্বাচনি সভা করতে এলেই গলায় হলুদ গামছা পরছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। নির্বাচনি প্রচারেও প্রার্থীদের গলায় হলুদ গামছা দেখা যাচ্ছে। এই গামছা এখন প্রায় সব বাজারেই পাওয়া যায়। গামছাগুলি ২৫ থেকে ৬০ টাকা দামে বিক্রি করছেন দোকানদাররা।
তবে হলুদ গামছার প্রচলন নিয়ে নানা মত রয়েছে। গ্রেটার কোচবিহারের নেতা বংশীবদন বর্মনের দাবি, ১৯৯৮ সালে কোচবিহারে তিনি ও তাঁর সংগঠনের কর্মীরাই প্রথম হলুদ গামছা ব্যবহার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘শুভ কাজ ও পরিবর্তনের প্রতীক হিসাবে হলুদ রং ব্যবহার করে রাজবংশী জনজাতি। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের রথে হলুদ রঙের পতাকা ছিল। তাই বিভিন্ন কারণে আমরা হলুদ রঙের গামছার প্রচলন শুরু করি। পরে তা রাজবংশী জনজাতির ভাবাবেগের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। এই ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়েই বিভিন্ন দলের নেতারা তাঁদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হলুদ গামছা ব্যবহার করে চলেছেন।’ শুধু রাজবংশীদের ভোট নিজেদের দখলে রাখতেই তাঁরা হলুদ গামছা ব্যবহার করছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
যদিও এবিষয়ে কামতাপুরি ভাষার সিনেমা পরিচালক তপনকুমার রায় ভিন্ন কথা বলেন। তাঁর মতে, ‘উত্তরের ভূমিপুত্ররা তাঁতে বোনা গামছা ব্যবহার করতেন। কিন্তু তা হলুদ রঙের ছিল না। তবে বর্তমানে রাজবংশী-কামতাপুরি মানুষ এই হলুদ গামছাকে নিজেদের কৃষ্টির অঙ্গ হিসেবে ধরে নিয়েছেন। এই কারণে রাজবংশী-কামতাপুরি মানুষের ভোট নিজেদের ঝুলিতে রাখতে নেতারা হলুদ গামছা ব্যবহার করছেন।’
বর্তমানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলির কর্মসূচিতেও হলুদ গামছার ছড়াছড়ি। গত কয়েকবছর ধরে এই গামছার চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছে। তবে কেউ হলুদ গামছার অবমাননা করলে তাঁর প্রতিবাদও করছে রাজবংশী সংগঠনগুলি। এবিষয়ে জোরপাটকি হাইস্কুলের শিক্ষক রতন বর্মন বলেন, ‘হলুদ গামছা রাজবংশীদের জাগরণের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন শুভ কাজে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অথিতিদের আপ্যায়ন করতে ব্যবহার করা হচ্ছে হলুদ গামছা। রাজনৈতিক দলের নেতারাও এখন হলুদ গামছা গলায় পরে ঘুরছেন, সামনে ভোট বলে কথা।’