প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: গত ১০ অগাস্ট সংসদীয় বাদল অধিবেশনের শেষলগ্নে মণিপুর ইস্যুতে সরব হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘অন্ধ রাজা’, ‘নীরব’ মোদি আখ্যা দিয়ে লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হন কংগ্রেসের লোকসভা দলনেতা তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী। বিতর্কিত এবং অসংসদীয় মন্তব্যের জন্য অধীরকে লোকসভা থেকে সাসপেন্ড করেই ক্ষান্ত হয়নি কেন্দ্রীয় শাসকদল বিজেপি। তাঁর বিরুদ্ধে জারি করা হয় স্বাধিকার ভঙ্গের (প্রিভিলেজ) অভিযোগে নোটিশও। লোকসভা অধ্যক্ষ ওম বিড়লার নির্দেশ মতন অধীরের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ যতক্ষণ না ভ্রান্ত প্রমাণিত হচ্ছে বা সে নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিচ্ছে, ততদিন সংসদে বহিষ্কৃতই থাকবেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।
সোমবার সংসদীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী শুক্রবার ১৮ অগাস্ট বর্ষীয়ান বিজেপি সাংসদ সুশীল কুমার সিংয়ের পৌরহিত্যে বসতে চলেছে প্রিভিলেজ কমিটির বৈঠক। যেখানে অধীরের সাসপেনশন ইস্যুতে আলোচনায় বসবেন ১৫ সদস্যের বিশেষ কমিটি। তবে প্রথম বৈঠকেই অভিযুক্ত অধীর চৌধুরীকে তলব করা হবে কিনা, তা এখনও জানা যায়নি।
বাদল অধিবেশনের শেষলগ্নে অধীর চৌধুরীর সাসপেনশন নিয়ে উত্তাল হয় কেন্দ্রীয় রাজনীতি এবং সংসদীয় পরিসর। অনৈতিকভাবে অধীর চৌধুরীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এই অভিযোগ তুলে সরব হন বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের সদস্যরা। প্রদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে অধীরের সাসপেনশন ইস্যুতে প্রতিবাদে সোচ্চার হয় তৃণমূল কংগ্রেসও। লোকসভা ‘প্রিভিলেজ কমিটি’র অন্যতম সদস্য, তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা চিফ হুইপ এবং বর্ষীয়ান আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘অধীর চৌধুরীকে অন্যায়ভাবে সাসপেন্ড করা হল। এই সিদ্ধান্ত তীব্র নিন্দনীয়। তিনি (অধীর) প্রধানমন্ত্রীকে কোনও কটুকথা বলেননি। এর থেকে প্রমাণিত সরকারপক্ষ নীতিগতভাবে দৈন্য হয়ে পড়েছে।’
এর পালটা তোপ দেগে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি বলেন, ‘সঠিক পদক্ষেপই নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বিরোধী নেতাদের কুমন্তব্যের রীতি বন্ধ হওয়া উচিত।’ এর পরেই অধীরের সাসপেনশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বাদল অধিবেশনের শেষদিন সংসদে আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসে সমমনোভাবাপন্ন বিরোধী দলগুলি।
এআইসিসিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অধীর চৌধুরী জানান, তিনি কোনও অসংসদীয় মন্তব্য করেননি। তবু প্রিভিলেজ কমিটি তাঁকে তলব করলে অবশ্যই তিনি হাজিরা দেবেন। কিন্তু কোনও শর্তেই ক্ষমা তিনি চাইবেন না। ফলত, ১৮ অগাস্ট প্রিভিলেজ কমিটির আসন্ন বৈঠক অধীরের সাসপেনশন প্রত্যাহার করতে সক্ষম হয় কিনা, সেটাই এই মুহূর্তে দেখার বিষয়।