কুমারগঞ্জঃ চরম আর্থিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করল এক আদিবাসী ছাত্রী। দরিদ্র পরিবারের এই কৃতী ছাত্রীর চোখে এখন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। এই মেধাবী ছাত্রীর নাম সুদীপা মুর্মু। এবার মাধ্যমিকে ৬০২ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে জেলায় সম্ভাব্য প্রথম সুদীপা। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় এমন পরিবারের সন্তান সুদীপা তার মা-বাবাকে পাশে বসিয়ে কাঁদো কাঁদো চোখে উত্তরবঙ্গ সংবাদকে জানালেন ভবিষ্যতে তিনি ডাক্তার হতে চান।
কুমারগঞ্জ ব্লকের বটুন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দাশুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী তথা মাদারগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা সুদীপা মুর্মু এবার ৮৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে পাশ করেছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের দাবি, এই আদিবাসী ছাত্রী জেলায় আদিবাসীদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রথম। আগামী দিনে চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে হতদরিদ্র পরিবারের ছাত্রী সুদীপার। তবে এই ইচ্ছেপূরণ হবে কিনা সেই দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়ে গিয়েছে তার। চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি জানান, ‘বড় হয়ে আমি ডাক্তার হতে চাই। জানিনা আমার স্বপ্ন সফল হবে কিনা! সরকারি সাহায্য পেলে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাব’।
হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে সুদীপা। মাথা গোঁজার আস্থানা বলতে মাটির ঘর। বিশেষত বর্ষাকালে চরম কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করতে হয় তাদের। সুদিপার মা দিপালী বাস্কে জানিয়েছেন, ‘ছোটবেলা থেকেই মেয়ে পড়াশোনায় ভালো। কোনও দিনও তাকে পড়াশোনার কথা বলতে হয়নি। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাও ভালো লাগে তার।’ দিন আনা দিন খাওয়া এই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সুদিপার বাবা সুধির মুর্মু জানিয়েছেন, ‘আগামী দিনে মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা জানিনা। কারণ চিকিৎসক হতে গেলে অনেক অর্থের প্রয়োজন। কতটা মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব বুঝে উঠতে পারছি না। তবে প্রশাসন সহযোগিতা করলে নিশ্চয়ই সুদীপা তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে’। দাশুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নিমাই সরকার জানিয়েছেন, ‘ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিল সুদীপা মুর্মু। ওর ফলাফলে আমরা সবাই খুশি। প্রশাসন ওর পাশে দাঁড়ালে সে তার লক্ষ্যে পৌঁছবেই।’
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি সন্তোষ হাঁসদা আশ্বাস দিয়েছেন, সুদীপার ইচ্ছে পূরণে প্রশাসনের সঙ্গে কতটা সহযোগিতা করা যায় সেই বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন।