রণজিৎ ঘোষ, পানিট্যাঙ্কি (খড়িবাড়ি) : নেপাল সীমান্তে রাজ্য সরকারের হাতে থাকা পরিত্যক্ত জমি দখল হওয়ার মুখে। অথচ এই জমিতেই ট্রাকস্ট্যান্ড তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। এখানে ট্রাকস্ট্যান্ড তৈরি হলে রাজ্য সরকারের ঘরে মাসে কোটি টাকা রাজস্ব বাবদ ঢুকতে পারে। সরকারিভাবে সাইনবোর্ড লাগানোর পরেও সেই প্রকল্প না হওয়ায় বর্তমানে অটো, টোটো ঢুকিয়ে জায়গা দখলের পথে। একটু একটু করে জমি দখল করে দোকানও তৈরির চেষ্টা চলছে। দার্জিলিংয়ের জেলা শাসক এস পন্নমবলম বলেছেন, ‘আমরা পানিট্যাঙ্কিতে পাঁচ একর জায়গা চিহ্নিত করে ট্রাকস্ট্যান্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাজ্য সরকারের কাছে এই স্ট্যান্ডের পরিকাঠামো তৈরির জন্য আর্থিক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। টাকা এলে কাজ হবে।’
খড়িবাড়ির ভারত-নেপাল সীমান্ত পানিট্যাঙ্কিতে প্রতিদিন অন্তত ২০০-২৫০টি পণ্যবাহী লরি দাঁড়িয়ে থাকে। সীমান্ত পেরিয়ে নেপালে ঢোকার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র পরীক্ষা করা সহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে বহু সময় লাগে। আবার সীমা শুল্ক দপ্তরের দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের আগে অথবা পরে এলে অফিস বন্ধ থাকায় গাড়িগুলিকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এভাবে লরি থেকে অনেক সময় পণ্য চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার পেট্রোপণ্য, এলপিজি ভর্তি গাড়িগুলিও রাস্তার পাশে অথবা এশিয়ান হাইওয়ের ফ্লাইওভারে দিনরাত দাঁড়িয়ে থাকছে। দার্জিলিংয়ের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক সোনম লেপচার বক্তব্য, ‘ওই জায়গায় একটি ট্রাক টার্মিনাস তৈরির জন্য ডিটেইলস প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
পানিট্যাঙ্কি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দীপক চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘আন্তর্জাতিক সীমান্ত হওয়ায় এখানে প্রচুর যানবাহন প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকে। অথচ সরকার এখানে এত বিশাল জমি ফেলে রেখেছে। আমরা এর আগে বিষয়টি জেলা প্রশাসন এবং শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের জানিয়েছিলাম। দার্জিলিংয়ের জেলা শাসক, পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিক এসে দেখে গিয়েছিলেন। তার পরে এখানে সরকারি জমি বলে বোর্ডও বসানো হয়। কিন্তু স্ট্যান্ড আর তৈরি হয়নি।’
সীমা শুল্ক দপ্তর সূত্রে বলা হয়েছে, পানিট্যাঙ্কির সীমান্তে দপ্তরের অফিসের পাশেই রাজ্য সরকারের যে জমি রয়েছে সেখানে ট্রাকস্ট্যান্ড তৈরি হলে অনেক সমস্যারই সমাধান হবে। শনিবার সীমা শুল্ক দপ্তরের অফিস বন্ধ থাকে। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই পণ্যবাহী গাড়িগুলি সরকারি কাজের সময়ের পরে আসায় সেগুলিকে পরদিন অফিস না খোলা পর্যন্ত সীমান্তে রাস্তার উপরেই অপেক্ষা করতে হয়। এর ফলে পণ্য নষ্ট, চুরির ভয়ও থাকে। স্ট্যান্ড হলে গাড়িগুলি যেমন সুরক্ষিত থাকবে, তেমনই সরকারেরও রাজস্ব আয় হবে। পরিবহণ দপ্তরের বক্তব্য, ট্রাকস্ট্যান্ড হলে সেখানে প্রায় ২০০ গাড়ি দাঁড়াতে পারে এমন ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিটি গাড়ি থেকে প্রতিদিন ২৫০ টাকা করে পার্কিং ফি নেওয়া হবে এমন প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছিল। কিন্তু স্ট্যান্ড তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সবকিছুই ঝুলে রয়েছে।