মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ ও পূর্ণেন্দু সরকার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি : বাঘবনে বাঘ নেই। এই বদনাম এবার ঘুচল আলিপুরদুয়ারের বক্সা টাইগার রিজার্ভ এলাকার। ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি ২০১৮ সালে বাঘ শুমারিতে বক্সা বাঘবনে বাঘের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। কিন্তু ২০২২ সালের বাঘ শুমারির রিপোর্টে বক্সার জঙ্গলে একটি বাঘের উপস্থিতির কথা প্রকাশ করা হয়েছে। এই রিপোর্ট শনিবার প্রকাশিত হয়। সেই রিপোর্টে নর্দার্ন ওয়েস্টবেঙ্গলে দুটি বাঘের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে বক্সায় একটি বাঘের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও নেওড়াভ্যালি জাতীয় উদ্যানে বাঘ নিয়ে একটি শব্দ খরচ করেনি কেন্দ্র। তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বক্সা টাইগার রিজার্ভের ডিএফডি (ওয়েস্ট) পারভিন কাসোয়ান বলেন, ‘২০২২ সালের বাঘ শুমারিতে বক্সা টাইগার রিজার্ভ এলাকায় একটি বাঘের উপস্থিতি উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের বাঘ শুমারিতে বক্সায় বাঘের উপস্থিতি ছিল না। বক্সায় বাঘেদের বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশ রয়েছে, বাঘের উপস্থিতিতে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। গত কয়েক বছরে বাঘেদের খাদ্যের জন্য প্রচুর হরিণ ছাড়া হয়েছে। বাঘেদের বসবাসের অনুকূল করে তুলতে বাঘবনে অনেক কাজ করা হয়েছে।’ বক্সায় প্রথমে এক গাড়ির চালক স্বচক্ষে বাঘ দেখেন। বিষয়টি তিনি বনকর্তাদের জানান। এরপর ২০২১ সালে বক্সা বাঘবনে ট্রাপ ক্যামেরায় একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘের ছবি ধরা পড়ে। তখনই বাঘের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়ে যায়। প্রায় ৭৬০ বর্গকিলোমিটার বক্সার জঙ্গলে একসময় বাঘেদের গর্জন শোনা যেত। ১৯৯৩ সালে ভয়াবহ বন্যার পর বাঘের বসবাসের উপযোগী জায়গার ঘাস পলিমাটি চাপা পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। পানীয় জলের উৎসগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এরপর থেকে বাঘের উপস্থিতির আর প্রমাণ মেলেনি।
বক্সায় ফের বাইরে থেকে বাঘ এনে ছাড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেইমতো জলাধার সংস্কার, বিশেষ ধরনের ঘাস লাগানো, প্রায় হাজারখানেক হরিণ পর্যায়ক্রমে এনে জঙ্গলে ছাড়াও হয়েছে। কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় একটি প্রতিনিধিদলও বক্সার জঙ্গলের অবস্থা ঘুরে দেখেছেন। বক্সার কোর এলাকায় থাকা কয়েকটি বনবস্তিকে অন্যত্র সরানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বন দপ্তর। শনিবার কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রকের প্রকাশিত স্ট্যাটাস অফ টাইগার-২০২২ রিপোর্টে সুন্দরবনে ১০১টি বাঘ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জলপাইগুড়ির গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের অধীন কালিম্পং জেলার নেওড়াভ্যালি জাতীয় উদ্যানে দুটি বাঘের অস্তিত্বের কথা বন দপ্তর চার বছর আগেই জানিয়েছিল। কিন্তু এবারের রিপোর্টে দেশের ব্যাঘ্র মানচিত্রে নেওড়াভ্যালির নাম নেই।
নেওড়াভ্যালি জাতীয় উদ্যানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা জানতে ২০২২ সালের মে মাসের বাঘ শুমারিতে অত্যাধুনিক পলিগন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল। বাঘের সংখ্যা জানতে অত্যাধুনিক এম স্ট্রিপ অ্যাপের ব্যবহার করা হয়েছিল জাতীয় টাইগার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে। তারপর বন দপ্তরের একের পর এক ট্র্যাপ ক্যামেরায় ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে প্রায় ১৫ থেকে ২২টির মতো বাঘের ছবি ধরা পড়ে। এখন নেওড়ায় বাঘের অস্তিত্ব নস্যাৎ হয়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, ওই বাঘগুলি কি প্রচণ্ড ঠান্ডায় ভুটান বা সিকিম থেকে নেওড়াভ্যালিতে নেমে এসেছিল।
জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক ডঃ রাজা রাউত বলেন, ‘বাঘের ছবি নেওড়ায় উঠেছিল। যদি ছবি ও মল পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়ে থাকে তাহলে সেগুলি বাঘের না কীসের তা জানানো উচিত।’ রাজ্য বন্যপ্রাণী উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য রাজেশ লাকড়া মনে করেন, ‘নেওড়ায় বাঘের ছবি বন দপ্তরের ক্যামেরায় উঠেছিল। বাঘের মলের নমুনা ও ছবি পাঠানোর পর সেই বিষয়ে কেন্দ্রের রিপোর্টে উল্লেখ থাকা উচিত ছিল।’ বন্যপ্রাণ বিভাগের উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল রাজেন্দ্র জাখর বলেন, ‘আমরা নেওড়ায় পাওয়া বাঘের ছবি ও মলের নমুনা পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে পাঠিয়েছিলাম। তার রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি। দেশের টাইগার স্ট্যাটাস রিপোর্ট সম্পূর্ণ না পড়ে মন্তব্য করব না।’